ছিল ওয়ান ডে। হয়ে গেল পাঁচ দিনের টেস্ট ক্রিকেট।
এমনকী, দুর্গাপুজোকেও পিছনে ফেলে দিল নবদ্বীপের রাস। ৩১ অক্টোবর পোড়ামাতলার মহিষমর্দিনী মাতার উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে যে রাসের সূচনা, ৭ নভেম্বর কার্নিভাল দিয়ে তার সমাপ্তি।
প্রায় তিনশো বছর ধরে বদলাতে বদলাতে নবদ্বীপের রাস এখন এমনই রূপ ধারন করেছে। শহরের প্রবীণরা জানাচ্ছেন, তাঁদের ছেলেবেলায় বেশিরভাগ প্রতিমা শেষ হতো রাসের দিন সকালে। সারারাত কাজ করে ভোরবেলা ভারা খুলে প্রতিমা প্রণাম করে চলে যেতেন পালমশাই। তার পরে পাড়ার মহিলারা পুজোর জায়গা পরিষ্কার করে গোবর দিয়ে নিকিয়ে পুজোর আয়োজন করতেন। সব মিটতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। রাতে চটের প্যান্ডেলের নিচে টিমটিমে আলোয় প্রতিমার সামনে ঢোল সানাইয়ের তালে উদ্দাম নাচ। মাত্র পঞ্চাশ বছর আগেও এই ছিল নবদ্বীপের রাস। তবে তিনশো বছর ধরে কালের নিয়মে উৎসবের গা থেকে খসে পড়েছে প্রাচীনত্ব। সময়ের ছোঁয়াচ লেগেছে মূর্তি থেকে মণ্ডপ, আলোকসজ্জা থেকে শোভাযাত্রা, সব কিছুতেই। সুউচ্চ প্রতিমা ছিল একসময় নবদ্বীপের রাসের প্রধান আকর্ষণ। কিন্তু আবার বদল আসছে নবদ্বীপের রাসে। বড় বড় প্রতিমা নয়, নবদ্বীপের রাস ঢলছে থিমের দিকে। এক দিনের বদলে পাঁচদিনের ‘যথাবিহিত’ উৎসব ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।
গত কয়েকবছর ধরে রাসে থিমের খেলায় চমকে দিচ্ছে নবদ্বীপ। মালঞ্চপাড়া ইয়াং ব্লাড, মুক্তিসূর্য ক্লাব, জনপ্রিয় ক্লাব দর্শনার্থীদের কয়েকশো ফুট উঁচু পাহাড় চূড়োর অবিরল তুষারপাত থেকে মঙ্গলগ্রহে যাত্রা কিংবা জিপিআরএসের মাধ্যমে আলোকসজ্জা নিয়ন্ত্রণ—চমকের শেষ নেই। বাজেট ছাড়াচ্ছে বারো থেকে পনেরো লাখের গণ্ডী।
এ বার থিমের রমরমা আরও বেড়েছে। জনপ্রিয় ক্লাব যেমন বাহুবলী ২ এর ময়ূরপঙ্খী নৌকায় চড়াতে চায় দর্শকদের। তেমনি সবুজ সঙ্ঘ নিয়ে যাচ্ছেন ভয়াল হানাবাড়িতে। রাজু সূত্রধরের মণ্ডপের থিম বৌদ্ধ ও জৈন মন্দিরের মিশ্রণে গড়া। প্রাচীন মায়াপুরের ভারতমাতা এ বার হাজার হাতের।
তবে এ বার যাবতীয় থিমের কেন্দ্রে কার্নিভাল। প্রতিটি অংশগ্রহণকারী বারোয়ারি কর্তৃপক্ষ গোপন রাখছেন তাঁদের পরিকল্পনা। তবে শোনা যাচ্ছে, বাংলার এমন কোনও নাচ নেই যা সে দিন নবদ্বীপের পথে দেখা যাবে না। নাটক, ব্রতচারী, আবৃত্তির সঙ্গে বাংলা এবং বৃন্দাবনী ধারার কীর্তনে মজবে নবদ্বীপের পথ। নতুন ধারার রাসের অপেক্ষায় এখন নবদ্বীপ।