mysterious death

দোকানের লকার রুমে ব্যবসায়ীর দেহ, রহস্য

এই রহস্যজনক খুন ছিল এ দিন কৃষ্ণনগর শহরে অন্যতম আলোচ্য বিষয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করেছে। সন্দেহজনক দু’জনের সন্ধান চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৫৫
Share:

গোবিন্দবাবুর স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

তিনি শহরের নামী স্বর্ণব্যবসায়ী। একাধিক সোনার দোকান তাঁর। তার মধ্যে একটি নিজের বাড়ির একতলায়। সেই দোকানের লকাররুমের মেঝেতে রবিবার সকালে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে! মৃতদেহের গলায় স্কিপিংয়ের দড়ির ফাঁস লাগানো ছিল।
সোনার ব্যবসায়ী গোবিন্দ গড়াইয়ের (৬৫) এই রহস্যজনক খুন ছিল এ দিন কৃষ্ণনগর শহরে অন্যতম আলোচ্য বিষয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করেছে। সন্দেহজনক দু’জনের সন্ধান চলছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বংশানুক্রমে স্বর্ণব্যবসার সঙ্গে জড়িত গোবিন্দবাবু। বাড়ি কৃষ্ণনগরের জজকোর্ট পাড়া এলাকার জনবহুল অঞ্চলে।
বাড়ির কাছেই তাঁর দুই ছেলের দুটি সোনার দোকান আছে। আর তাঁর দোকান ছিল নিজের বাড়ির এক তলায়। গত আট বছর সেখানে একটি নামী গহনা সংস্থার ফ্যানচাইজি হিসাবে ব্যবসা করছিলেন। কিন্তু লকডাউন শুরু হতে তিনি ব্যবসা বন্ধ করে শো-রুম লিজে দেওয়ার কথা ভাবতে থাকেন।
কৃষ্ণনগরেরই বাসিন্দা এক জ্যোতিষী দুর্গাদাস তেওয়ারীর সঙ্গে গোবিন্দবাবুর দীর্ঘদিনের আলাপ। তিনিই কাজল বিশ্বাস নামে এক যুবকের সঙ্গে কিছু দিন আগে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেন। এই যুবক সোনার গহনা, ও দামি পাথরের ব্যবসা করেন বলে জানিয়েছিলেন। বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলেন রানাঘাটের উত্তরপাড়া এলাকায়। শো-রুমটি কাজলকে লিজ দেওয়ার কথা পাকা হয়ে গিয়েছিল এককালীন ৩০ লক্ষ টাকা ও মাসে ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। রবিবারই বিকেলে আইনজীবীর কাছে গিয়ে চুক্তিপত্র তৈরি করার কথা ছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ কাজল বিশ্বাস গোবিন্দবাবুর বাড়ি আসেন। গোবিন্দবাবু তখন পুজো করছিলেন। কাজল এসেছেন শুনে হাফপ্যান্ট পরেই নীচে চলে যান। তাঁরা শো-রুমের ভিতরেই বসে কথা বলছিলেন। কিছু সময় পর চা নিয়ে গোবিন্দবাবুর স্ত্রী শম্পাদেবী ডাকাডাকি করে সাড়়া পান না। তিনি বাড়ির পরিচারিকাকে দিয়ে চায়ের কাপ শো-রুমের বাইরে স্কুটির উপরে রেখে দেন। তার পরেও চা ওখানে পড়়ে থাকায় শম্পাদেবী নীচে নেমে আসেন।
তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, শো-রুমের ভিতরে উঁকি মেরে দেখেন লোডশেডিংয়ের জন্য ঘর অন্ধকার। আর শো-কেসের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কাজল। শম্পাদেবী বলেন, “কাজল আমাকে বলেন, একটা ফোন আসায় উনি বাইরে গিয়েছেন। আমার কেমন সন্দেহ হওয়ায় রাস্তা পর্যন্ত গিয়ে খোঁজ করতে থাকি। দেখতে পাই না। আবার ফিরে শো-রুমে উঁকি দিতে কাজল বলেন, ‘কাকা আমাকে ফোন করে বাইরে ডাকছেন। আমি যাই।’ বলে তড়়িঘড়়ি বাইক নিয়ে চলে যান। ওঁর হাতে একটা ব্যাগ ছিল।” তাঁর কথায়, “সাত আট দিন আগে কাজলের সঙ্গে আমার স্বামীর আলাপ হয়েছিল। শনিবার দুপুরে দু’জনে আমাদের বাড়িতে এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়াও করেন।”
শম্পাদেবী জানান, কাজল চলে যাওয়ার পর তিনি আর তাঁর বউমা অভিরূপাদেবী শো-রুমে ঢুকে দেখেন, শো-কেসের ভিতরের কোনও গহনা নেই। মেঝেতে শুধু চার পাঁচটা সোনার দুল পড়ে আছে। অভিরূপাদেবী বলেন, “লকার রুমের দরজা খোলা ছিল। ঠেলে দেখি, বাবা ঘরের ভিতরে মেঝেতে পড়ে রয়েছেন মুখ থুবড়়ে। গলায় লাফ দড়ি প্যাঁচানো আছে আর মেঝেতে রক্ত। দড়়িতেও রক্ত লেগে আছে।” পুলিশ এই ঘটনায় জ্যোতিষী দুর্গাদাস তেওয়ারীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে এর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মনমালিন্য তৈরির কথাও তদন্তে উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগে শো-রুমের ভিতর থেকে দুই বউমা প্রায় আট থেকে নয় লক্ষ টাকার সোনার গহনা নিয়েছিলেন। পুলিশ সব দিকই খতিয়ে দেখছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement