শূন্য টেবিল। ছবি: প্রণব দেবনাথ
কৃষ্ণনগর পুরসভার লাইসেন্স বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর পঞ্চাশের এক জন। ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ করাকে এসেছেন। কিন্তু তা করবে কে? ঘরের প্রতিটি টেবিল ফাঁকা। কর্মীরা চলে গিয়েছেন পুজোর শোভাযাত্রায়।
কর থেকে শুরু করে সব দফতরের প্রায় সমস্ত টেবিলই বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা থেকে ফাঁকা। কৃষ্ণনগর পুরসভায় কার্যত ‘অঘোষিত ছুটি’। পুরপ্রধান, তৃণমূলের রীতা দাসের ব্যাখ্যা, “একটা উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সকলেই চাইছেন তাতে শামিল হতে। আমরা বারণ করি কী করে?” তাঁর দাবি, “কর্মীরা তো সমস্ত কাজ করে অল্প কিছু সময়ের জন্য গিয়েছিলেন। এতে কারও কোনও সমস্যা হয়নি।”
শুধু পুরসভা কেন? গোটা শহর জুড়েই যেন ছুটির পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল সপ্তাহের মাঝামাঝি। বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেলা সাড়ে ১২টার পর ছুটি হয়ে গিয়েছে। বাতিল করা হয়েছে দ্বিতীয় ভাগের পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা অন্য কোনও দিন নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সরকারি ভাবে ছুটির কোনও নির্দেশিকা যদিও জারি করা হয়নি। নদিয়া জেলা স্কুল পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল বলছেন, “স্কুল ছুটির কোনও সরকারি নির্দেশিকা নেই। তার পরেও কেন এমনটা হল তা স্কুলগুলির কাছে জানতে চাওয়া হবে।”
সরকারের তরফে শোভাযাত্রায় পড়ুয়াদের যোগদানের কথা বলা হলেও তা ছিল কেবল একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য। তা হলে কেন পরীক্ষা বাতিল করে পুরো স্কুলই ছুটি দিয়ে দেওয়া হল?
শিক্ষকদের দাবি, ‘নো এন্ট্রি’ এবং তার দরুন যানজটের জেরে দুপুর থেকেই শহরের রাস্তায় যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তাতে পড়ুয়ারা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্কুলে আসতে পারত না। কারণ অন্যান্য যানবাহন দূরের কথা, শহরের প্রধান রাস্তাগুলিতে টোটো পর্যন্ত চলতে দেওয়া হয়নি। শহরের বাইরে থেকেও প্রচুর ছেলেমেয়ে বাসে করে স্কুলে আসে। শহরে বাস না ঢোকায় তারা পরীক্ষা দিতে পারত না। কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “প্রশাসন থেকে আমাদের আগেই ‘নো এন্ট্রি’র বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সমস্ত দিক বিচার করেই আমরা পরীক্ষা বন্ধ করে স্কুল ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”
পুজো আসতে এখনও এক মাস। কাছারি থেকে ক্লাসঘরে পুজোর ছুটি কিন্তু উঁকি দিয়ে গেল।