মহম্মদ আবুল কাশেম। ফাইল ছবি।
আমাদের ছোটবেলায় রোজার মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই শুরু হয়ে যেত ইদের কাউন্ট-ডাউন। তখন থেকে উৎসব পালনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা শুরু হয়ে যেত। আমাদের গ্রাম ছিল বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া লালগোলার পদ্মা নদীর ধারে অতি মনোরম পরিবেশে। সম্ভাব্য শেষ রোজার দিন সন্ধ্যায় ইদের চাঁদ দেখার জন্য গ্রামের ছেলে থেকে বুড়োর দল গ্রামের শেষ প্রান্তে পদ্মানদীর পাড়ে আমরা সবাই জড়ো হতাম। সেখানে আমরা সকলে আকশের দিকে চেয়ে থাকতাম ইদের চাঁদ দেখার জন্য। চাঁদ দেখা পেতে কী যে আনন্দ হত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চাঁদ দেখতে পেয়ে বড়দের অনেকেই আজান দিতেন, আবার অনেকেই চিৎকার করে আনন্দ করতেন।
তখন অবশ্য ইদের বাজারে এত জাকজমক ছিল না। ইদের আগে আব্বা আমাদের লালগোলা বাজারে নিয়ে যেতেন। তখন হাতে অর্থ কম থাকলেও আন্তরিকতা ছিল। ইদের আগের রাত থেকেই কে কোন পোশাক পরবে, কে কী খাবে তার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন মা। ইদের আগের দিন রাত থেকে মা সে সব গুছিয়ে রাখতেন।এখন ইদের জন্য হাজারো খাবার বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তখন ইদের খাবারের সব কিছুই বাড়িতে তৈরি করতে হত। তখন বাজারে নানা কোম্পানির লাচ্ছা সিমুইয়ের চল ছিল না। বাড়িতে সিমুই তৈরির ছোট কল দিয়ে মায়েরা ইদের দিন দশেক আগে থেকে সিমুই তৈরি করতেন। সেই সিমুই ইদের দিনে রান্না করা হত। মিষ্টির দোকান থেকে আনা হত দই মিষ্টি। ব্যবস্থা করা হত মাংসের।ইদের সকালে উঠে সকলে স্নান সেরে তৈরি হতেন। বাড়ির বড়রা ছোটদের সাজিয়ে দিতেন।
নতুন পোশাক, চোখে সুরমা, কানের লতিতে আতর লাগিয়ে রওনা দিতাম ইদগাহে (যেখানে ইদের নমাজ পড়া হয়)। ইদের ময়দানে গোটা গ্রামের লোকজন জড়ো হতেন, ইদকে কেন্দ্র করে বসত নানা রকম খাবারের দোকান। সে সব দিনের আনন্দ ভোলার নয়। আজকের দিনে মেকি চিন্তা ভাবনার সঙ্গে সে সব দিনের পবিত্র আনন্দ ভালবাসাকে মেলাতে পারি না। খুব কষ্ট হয় সেদিনের আনন্দের কথা মনে পড়লে।