গণপ্রহারের ‘ভূত’ তাড়াবে কে

বহরমপুর থানার সাহাজাদপুর গ্রামের খবির শেখের মতোই গণপ্রহারে মারা গিয়েছেন নওদা থানার সোনাটিকুরি গ্রামের রাইহান মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৮
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

সন্দেহটাই আসল, মনোবিদেরা মনে করছেন— এক বার সে সন্দেহ দানা বাঁধলে তখন আর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। ‘মব’-এর রোখ চেপে গেলে সমাজ শাসনের দায় নিজের হাতেই তুলে নেয় তারা। মুর্শিদাবাদ জেলার আমজনতার মধ্যে প্রায়ই সেই ‘ভূত’ ভর করতে দেখা যায়। পুলিশের রেকর্ড সে কথাই বলছে। চিকিৎসকেরা বলছেন এ এক অবদমিত রোষ।

Advertisement

বহরমপুর থানার সাহাজাদপুর গ্রামের খবির শেখের মতোই গণপ্রহারে মারা গিয়েছেন নওদা থানার সোনাটিকুরি গ্রামের রাইহান মণ্ডল। চুরির চেষ্টার অভিযোগ তুলে গত বছরের ১ নভেম্বর রাতে তাকে পাশের রাজপুরের গ্রামে টেনে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুন করে উন্মত্ত জনতা। রাজপুরের এক তরুণীর সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল সোনাটিকুরি রাইহানের। পুলিশ জানায়, প্রণয়ের সম্পর্ক মেনে নিতে না পারায় চোর অপবাদে লোক জুটিয়ে, গণপ্রহার করা হয় তাকে।

২০১৭ সালের জুন মাসের গণপ্রহারে মৃত্যু হয় রঘুনাথগঞ্জ থানার মিঠিপুর-পানানগরের মানসিক ভারসাম্যহীন উতেরা বিবির (৪২)। পাশের সেকেন্দ্রা গ্রামের এক নাবালিকাকে অপহরণের অভিযোগে পেটানো হয় তাঁকে। একটি ট্রাক্টরের সঙ্গে বেঁধে কয়েক ঘণ্টা ধরে তাঁকে বেদম মারধর করা হয়। মৃতের স্বামী আজিজুল হকের দাবি, মানসিক ভারসাম্যহীন উতেরাকে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে খুন করা হয়।

Advertisement

সবে সন্ধ্যা নেমেছে। ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই। তৃণমূলের বহরমপুর (পূর্ব) ব্লকের কার্যকরী সভাপতি মাসুদ রানা শহর লাগোয়া কদবেলতলা এলাকায় একটি রেশন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বোমা ছুঁড়ে ও গুলি করে দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করে। ঘটনার সময় মোটর বাইকে চেপে যাচ্ছিলেন স্থানীয় মণীন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক শুভঙ্কর বাগচী। উন্মত্ত জনতা আর বাছ-বিচার করেনি। শুভঙ্করকে পেটানো শুরু হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

মা মারিয়া রাও তাঁর বছর দশেকের ছেলে কৈলাসকে মারধর করে। সেই দুঃখে বীরভূমের রামপুরহাট থেকে বহরমপুর পালিয়ে আসে যাযাবর সম্প্রদায়ের কৈলাশ। অভিযোগ, ২০০৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চুরি করার জন্য টেক্সটাইল মোড়ে এক জনের মোটর বাইকের ডিকি খোলার চেষ্টা করে সে। কৈলাশকে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ক্ষিপ্ত জনতা বেধড়ক মারধর করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ায় প্রাণে রক্ষা পায় বালক।

প্রাণে বাঁচেননি শৈলেন্দ্র প্রসাদ। বাড়ি বিহারে। জীবিকার কারণে থাকতেন মুম্বাই। সেখানে পরিচারিকার কাজ করতেন বহরমপুর থানার লক্ষ্ণণপুর গ্রামের এক বিধবা। প্রণয়ের পরিণতিতে তাঁদের বিয়ে। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে তাঁরা দু’জনে লক্ষ্ণণপুরে আসেন। ভিন্ন দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দু’জনের মধ্যে বিয়ে হওয়ায় ২০-২৫ মিলে শৈলেন্দ্রকে মারধর করে ১৪ জুলাই। পাটখেত থেকে ২০০৬ সালের ১৭ জুলাই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।

সেই অবদমিত রোষেরই শেষ শিকার খবির শেখ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement