তখনও এসি বা কুলারে গরম কাটাতে অভ্যস্ত হয়নি বাঙালি। গরমকাল মানেই গাছের ছায়ায় শীতলপাটি বিছিয়ে বসে হাত পাখার বাতাস। সকালে আম চিঁড়ে তো দুপুরে পান্তা। সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ আর লঙ্কা। তেষ্টা পেলে মাটির কুঁজো থেকে পাতকুয়োর ঠান্ডা জল। গরমকালের হারিয়ে যাওয়া এমনই কিছু স্মৃতি।
শীতলপাটি
সম্রাট ঔরঙ্গজেব তখন দিল্লির মসনদে। তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী দিল্লি যাবেন সুবে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। জরুরি প্রয়োজন। কিন্তু এক বিশেষ কারণে কেবলই পিছিয়ে যাচ্ছে তাঁর যাত্রার দিন। আসলে সম্রাটের সঙ্গে দেখা করতে গেলে উপঢৌকন নিয়ে যাওয়াই প্রথা। কিন্তু নবাব শুনেছেন ধর্মপ্রাণ ঔরঙ্গজেব দিল্লীশ্বর হয়েও নিতান্ত সাধারণ জীবনযাপন করেন। তাঁর জীবনে বিলাসিতার স্থান নেই। এহেন সম্রাটের উপযুক্ত উপহার হিসাবে মুর্শিদকুলি খাঁ অনেক ভাবনাচিন্তা করে শেষপর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন রুপোলি বেতের শীতলপাটি। কথিত আছে, উপহারে পাওয়া শীতলপাটি এতই পছন্দ হয়েছিল সম্রাটের যে তিনি নাকি আমৃত্যু শীতলপাটি পেতেই নমাজ পড়তেন।
মোঘল সম্রাট থেকে রানি ভিক্টোরিয়া। শীতলপাটির প্রেমে পড়া ব্যক্তিত্বের তালিকা দীর্ঘ। গরমের প্রাণান্তকর দুপুরে মেঝের উপর কিংবা দুঃসহ রাতে বিছানো শীতলপাটি বিছিয়ে নিদ্রার অভ্যাস গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের বাসিন্দাদের বহু কালের। গ্রামের মাটিলেপা দাওয়ায় পাতা ঘুমের বিছানার উপকরণ ছিল ওই শীতলপাটি কিংবা মাদুর। আটের দশক পর্যন্ত গরমের দুপুরে শীতলপাটি পেতে হাতপাখা ঘুরিয়ে হাওয়া খেতে খেতে গরমের দুপুর পার করে দিতেন শহর, গ্রামের মানুষ। সত্তরের দশকে ১০-১৫ টাকার মধ্যে শীতলপাটি মিলত। চৈত্র থেকে ভাদ্র মাস ছিল শীতলপাটির মরসুম। অসম, কোচবিহার ও মেদিনীপুর থেকে শ’য়ে শ’য়ে আসত শীতলপাটি। বাংলাদেশি শীতলপাটির দাম ছিল আকাশছোঁয়া।
তারপর দ্রুত বদলে যেতে লাগল জীবনযাপনের অভ্যাস। শীতলপাটি বা মাদুরের জায়গায় বাজারে এল রঙিন শতরঞ্চি, চাদর, বেডকভার। গৃহস্থের ঘরেও তক্তপোশ সরিয়ে জায়গা করে নিল খাট, ডিভান সোফা কাম বেড। শীতলপাটির দিন ফুরোলো। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গ্রামের কিছু মানুষ এখনও এ সব ব্যবহার করলেও শহরে কিন্তু ঘর বা মণ্ডপ সাজানোর উপকরণ মাত্র।
পান্তা বা পখাল
গৃহস্থের হেঁশেলের বাড়তি ভাতে সারারাত জল ঢেলে রেখে পরের দিন তাতে পেঁয়াজ, সরষের তেল আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে জিভে জল আনা পান্তা। সঙ্গে দু’একটা ফুলুরি হলে আর কোনও কথাই নেই। গ্রামবাংলার পছন্দের খাবার নিয়ে বাজিতে বিশ্বের অন্য যে কোনও খাবারকে গুনে গুনে সাত গোল দেবে এই নিরীহ পান্তা। সেই পান্তার যে এমন রাজকীয় রূপ কে জানত!
সাদা কুন্দফুলের পাঁপড়ির মতো সুগন্ধী গোবিন্দভোগ চাল অথবা বাসমতী চালের ‘সুসিদ্ধ অন্ন’। রান্নার পরে তাকে পোড়ামাটির পাত্রে (বিকল্পে পিতল বা তামার পাত্র) বরফঠান্ডা গোলাপজলে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পরে তাতে মেশানো হবে জিরে ভাজার মিহি গুঁড়ো, আদা, কাঁচালঙ্কার কুচো। চাইলে মেশানো যেতে পারে আধভাঙা কাজু, পেস্তা। এ বার পাত্র বদল। ওই সুগন্ধী শীতল অন্ন ঢালা হবে পাথরের বড় পাত্রে। এ বার তাতে মিশবে সাদা টক দই এবং সব শেষে কয়েক ফোঁটা গন্ধরাজ লেবুর রস। ব্যস, চেনা পান্তা এ বার হয়ে উঠেছে দেবভোগ্য ‘পখাল’ বা ‘পাখাল’।
নবদ্বীপের প্রায় প্রতিটি বৈষ্ণব মঠমন্দিরে গোটা গ্রীষ্মকাল জুড়ে বিকেলের দিকে দেবতাকে নিবেদন করা হয় ওই সুস্বাদু পখাল ভোগ। অবশ্যই পাথরের পাত্রে। গ্রীষ্ম প্রধান ওডিশার খেতে-খামারে কাজ করা, রোদে পোড়া মানুষদের সর্দিগর্মি ঠেকাতে ওই পখাল নাকি অবর্থ্য মহৌষধ। তাই সেখানে সকালে আলাদা ভাবে ভাত রান্নাই করা হয় পখালের জন্য। বাংলার পান্তা ওডিশায় পখাল। বলাই বাহুল্য, খেটে খাওয়া ভক্তদের পখালে মোটা চাল আর লেবুই যথেষ্ট। বড়জোর টক দই। ওই রাজসিক আয়োজন হয় ভোজন রসিক জগন্নাথের জন্য। নবদ্বীপের সঙ্গে পুরী তথা জগন্নাথের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন চৈতন্যদেব। সেই থেকে নবদ্বীপের বেশিরভাগ মন্দিরে পখাল ভোগের চল। পখালকে স্বাদু করার জন্য বিভিন্ন মন্দিরে নানা ধরনের মশলা ব্যবহার হয়। তবে সে সব খুবই গোপন ‘রেসিপি’। গরমের দুপুরে পখাল ভোগের স্বাদ নিতে লাইন পড়ে যায় মন্দিরে মন্দিরে।
নাটমন্দির থেকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অভিজাত বারান্দা। ফুলকাটা কাঁসার থালায় কিশোর রবিকে যত্ন করে নিজের পছন্দের পদ রেঁধে খাওয়াচ্ছেন নতুন বৌঠান। পান্তাভাত আর চিংড়ি চচ্চড়ি। খেয়ে উচ্ছ্বসিত রবি। আমজনতা থেকে অভিজাত মহলকে এ ভাবেই জুড়ে ছিল পান্তা। ভিজে, বাসি, জলঢালা, আমানি যে নামেই ডাকা হোক না কেন, আদতে সে পান্তা। শুধু নামই নয়, স্থানভেদে পান্তার সঙ্গী সঙ্গে কোথাও ছাতু, কোথাও ফুলুরি, কোথাও আখের গুড়।
তবে, হালের গরমে পান্তার চরিত্রে বদল ঘটেছে। জলে ভেজানো বাসি ভাত নয়, সদ্য রান্না করা ভাতে জল ঢেলে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে গরমের দুপুরে কিংবা রাতে খাওয়া এখন বেশ জনপ্রিয়। সঙ্গে কোনও একটা গরম ‘ফ্রাই’। চাহিদা বুঝে নামী রেস্তোরাঁয় গোটা গরমকাল জুড়ে পান্তার ডিশের ব্যবস্থা আছে। পান্তাভাত, আমতেল, পেঁয়াজ, লঙ্কা, আলুভর্তা, আলু পেঁয়াজ ভাজা, পোস্তর বড়া, টক দই আর রসগোল্লা। দামও নাগালের মধ্যে।
চিঁড়ে ফলার
বাঙালির ইতিহাসের আদিপর্বে নীহাররঞ্জন রায় লিখছেন, ‘...কালবিবেক ও কৃত্যতত্ত্বার্ণব গ্রন্থে আশ্বিন মাসে কোজাগরী পূর্ণিমা রাত্রে আত্মীয় বান্ধবদের চিপিটক বা চিড়া এবং নারকেলে প্রস্তুত নানা প্রকারের সন্দেশে পরিতৃপ্ত করতে হইত এবং সমস্ত রাত বিনিদ্র কাটিত পাশাখেলায়।’ সেই শুরু। মধ্যযুগে চিঁড়েকে লোকপ্রিয় করতে বৈষ্ণব উৎসবের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধে পানিহাটিতে নিত্যানন্দের আগমন উপলক্ষে ভক্ত রঘুনাথ দাসের বিখ্যাত ‘চিঁড়ে মহোৎসবে’ প্রচুর পরিমাণ চিঁড়ে, দই, কলা ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
কিছু দিন পরে নরোত্তম দাসের খেতুরী মহোৎসবেও চিঁড়ে-দই পরিবেশন করা হয়। তারপরেই ভক্ত সাধারণের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় চিঁড়ে পাকাপাকি জায়গা করে ফেলল। জলখাবার থেকে শুরু করে উৎসবে, উপবাসে চিঁড়ে হয়ে উঠল প্রধান খাদ্য। আরও পরের কথা। ভোজনরসিক মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের প্রশ্রয়ে তৈরি হয়েছিল বহু নতুন ধরনের খাদ্যবস্তু। মহারাজ সন্তুষ্ট হলে সেই পদ প্রিয়জন, পরিজনদের না খাইয়ে ছাড়তেন না। একবার কৃষ্ণনগরের গোপ সম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠানে নদিয়ারাজকে মিহি চিঁড়ে, ক্ষীর, দই, কলা দিয়ে অ্যাপ্যায়িত করা হয়। শোনা যায়, সেই থেকে মহারাজের অন্যতম পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছিল ক্ষীর, কলা দিয়ে চিঁড়ের ‘ফলার’।
কিন্তু মানুষ যবে থেকে ‘ফাস্ট ফুড’ চেখেছে, সে দিন থেকেই চিঁড়ের দিন গিয়েছে। গরমের দিনে আম-চিঁড়ে, দই-চিঁড়ে কিংবা কলা-চিঁড়ের মতো খাবার এখন কেউ খেতে চান না। মঠ-মন্দির, চটকল, পাথর খাদানের শ্রমিকেরাই এখন চিঁড়ের প্রধান ক্রেতা। গরমকালে কাঁচা চিঁড়ে জলে ভিজিয়ে একটু চিনি, নুন এবং পাতিলেবুর রস দিয়ে খাওয়ার কথা এখন ভাবাই যায় না। চিঁড়ের ক্রেতা এখন চানাচুর কোম্পানি। প্যাকেটবন্দি চিঁড়েভাজাও খুব জনপ্রিয়। চানাচুরের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চিঁড়েই এখন ভরসা ব্যবসায়ীদের।
ছায়া
কান্দি কর্ণসুবর্ণ রাজ্যসড়ক ছেড়ে ডান হাতে মাটির রাস্তা ধরে কিছুটা ভিতরে গেলেই মাস্টারদের বাড়ি। খোলামেলা বাড়ির দক্ষিণ দিকে নিমগাছ। নীচে প্রকাণ্ড মাচা। গরমের সন্ধ্যা নামতেই কাঁধে গামছা ফেলে গোটা গাঁয়ের লোক জুটত ওই মাচায়। কেউ একজন হেঁকে উঠত ‘ও মাস্টার রেডিওটা ছাড়ো দিকি’। অমনি গমগমে গলায় দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলে উঠতেন ‘আকাশবাণী কলকাতা। খবর পড়ছি...’। তখন মুক্তিযুদ্ধের সময়। তাই নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই মাস্টারবাড়ির নিমতলায়। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাপ থেকে পরিবারিক কলহের খুঁটিনাটি কিংবা গ্রাম্য দলাদলি, তখন সবই নখদর্পণে রাখত নিমতলা। সকাল গড়িয়ে দুপুর। ওই গাছতলায় গামছা বিছিয়ে একঘুমে কাবার করা রাত এখনও অনেক প্রবীণের স্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে।
যদিও বাস্তব হল নিমগাছটা কাটা পড়েছে। জবরদখলের ভয়ে গাছ লাগোয়া ছড়ানো মাঠ উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘিরে নিয়েছে মালিক। গরমের দুপুরে তেমন নিবিড় ছায়া গোটা গ্রামে আর কোথাও মেলে না। উন্নয়নের জোয়ারে বট বকুল নিমের ছায়া দ্রুত সরে যাচ্ছে গ্রামের উপর থেকে। শহরকে ছায়া যোগাচ্ছে বহু তল। জাতীয় কিংবা রাজ্যসড়কের দু’পাশ থেকে এক দেড়শো বছরের বয়োঃবৃদ্ধ গাছেরা বিলীয়মান। চাঁদিফাটা রোদের অসহনীয় দুপুরে হামেশাই অসুস্থ হয়ে পড়েন পথচারী।
অথচ জাম-জারুলের ছায়ায় বসেই মিথিলার কাছ থেকে ন্যায়চর্চার একাধিপত্য ছিনিয়ে নিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নবদ্বীপ অর্জন করেছিল নব্যন্যায়ের উজ্জ্বল উত্তরাধিকার। চৈতন্যদেব থেকে বুনোরামনাথ। বট থেকে তেঁতুল। নবদ্বীপের সঙ্গে গাছতলার সম্পর্ক ঐতিহাসিক। নব্যন্যায়ের কিংবদন্তী পণ্ডিত রামনাথ তর্কসিদ্ধান্ত ‘বুনো রামনাথ’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। সেকালেও তাঁর মতো দরিদ্র পণ্ডিত খুব কমই ছিলেন। নবদ্বীপের বনজঙ্গলে ভরা এলাকায় জীর্ণ কুটিরবাসী রামনাথ ‘বুনো’ হলে কী হবে। পাণ্ডিত্যে তিনি তখন খ্যাতির মধ্যগগনে। সারাক্ষণ ডুবে আছেন নব্যন্যায়ের জটিল প্রশ্নে। এক দিন সকালে টোলে যাচ্ছেন অন্যমনস্ক রামনাথ। ব্রাহ্মণী জানতে চাইলেন আজ তো ঘরে কিছুই নেই। কী রান্না হবে। চিন্তামগ্ন পণ্ডিতমশাইয়ের কানে সে প্রশ্ন ঢুকলে তো! উল্টে নির্বিকার ভাবে উঠোনের তেঁতুলগাছটা দেখতে দেখতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। এর পরে দুপুরে বাড়ি ফিরলেন রামনাথ। ভারতবিখ্যাত নৈয়ায়িকের দ্বিপ্রাহরিক ভোজনে সেদিন ব্রাহ্মণী পরিবেশন করলেন এক আশ্চর্য পদ। মোটা চালের ভাতের সঙ্গে তেঁতুলপাতার ঝোল। পরম তৃপ্তিভরে তাই খেয়ে গৃহিণীকে প্রশ্ন করলেন, “এই অপূর্ব আহার্য তুমি কী দিয়ে প্রস্তুত করলে?” ব্রাহ্মণী তো অবাক। তিনি খুশিঝরা গলায় বলে উঠলেন, “কেন, উঠোনের ওই তেঁতুলগাছের দিকে তাকিয়ে আপনিই তো সকালবেলায় বলে গেলেন।” শুনে খুশিতে শিশুর মতো নেচে উঠলেন রামনাথ। দাওয়া থেকে উঠোনে নেমে তেঁতুলগাছের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ব্রাহ্মণী আমাদের আর চিন্তা নেই। গাছের তেঁতুলপাতা তো ফুরিয়ে যাবে না। এ বার আমি নিশ্চিন্ত মনে ন্যায়চর্চা করতে পারব।”
কিন্তু তাঁর এই অনুমান ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। তেঁতুলগাছেরা যাবতীয় পাতা, ফল, ছায়া, আশ্রয়-সহ ফুরিয়ে যাচ্ছে। পণ্ডিতমশাই আন্দাজই করতে পারেননি। তাই গ্রামে ভোট এলেই দাম বাড়ে ছায়ার। সবচেয়ে জরুরি হয়ে ওঠে গাছতলা দখল। ছায়াবাজির উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে পুলিশকে আসতে হয়। হবেই তো। গাছতলা যে ‘কম পড়িয়াছে!’
কুঁজো
চড়ক অথবা চৈত্র সংক্রান্তির মেলা থেকে সরু মুখের কুঁজো কিংবা একটা প্রমাণ সাইজের বড় মুখের মাটির কলসি কেনা এক সময় প্রায় বাধ্যতামূলক ছিল। পয়লা বৈশাখের দিন সকালে নতুন মাটির কলসিভর্তি জলের সঙ্গে অন্ন এবং নতুন বস্ত্র ব্রাহ্মণকে দান করে বাণিজ্য শুরু করতেন ব্যবসায়ীরা। অনেক গৃহস্থ বাড়িতে মাটির ‘কলসি উৎসর্গ’ করতেন। সেকালে ঠান্ডা জলের জন্য ভরসা ছিল নদীর বালি আর কলসি। পোড়ামাটির লালচে পাত্রের গায়ে চিকচিক করত বালিতে মিশে থাকা অভ্র। কেউ কেউ আবার কলসির জলে ফেলে দিতেন দু-এক দানা কর্পূর। সুগন্ধী শীতল সে জলের স্বাদই আলাদা।
কলসি, কুঁজো, জালা হরেক কিসিমের মাটির পাত্র ছিল সেকালের গরমে ঠাণ্ডা জলের উৎস। পুজোর মরসুম শেষ হলেই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যেত পালবাড়িতে। যুগপুর, গোয়াসের পালপাড়া থেকে মাটির কলসি সরবরাহ হত নানা জায়গায়। এখন মৃৎশিল্পীদের আক্ষেপ, ‘‘জলের বোতল কেড়ে নিল কলসির সুদিন!’’
ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য