মাথায় নেই হেলমেট। বেপরোয়া গতিতে ছুটছে বাইক। এটাই বহরমপুরের নিত্যদিনের চিত্র। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
বহরমপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ত এলাকার মধ্যে কৃষ্ণনাথ কলেজ মোড় অন্যতম। শহরে গঙ্গার ধার ধরে যে রাস্তা গিয়েছে, তার একটা অংশ এটি। মোড়ের একটা রাস্তা ভাগীরথী নদীর দিকে গিয়েছে। বিপরীতের রাস্তাটি মোহন মোড়ে। উত্তরের রাস্তা গিয়েছে সার্কিট হাউস বিপরীতে মানকরা এলাকার দিকে। এই মোড়ে দাঁড়ালে কানে আসবে কান ফাটানো শব্দ। তবে সাউন্ড বক্সের সেই আওয়াজ ভেদ করে দেবে দ্রুতগামী মোটরবাইকের শব্দ।
মোটরবাইকের সিসি (কিউবিক ক্যাপাসিটি) যত বেশি, শব্দ ও গতি তত বেশি। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককে ডানে রেখে যে রাস্তা বলরামপুর, মানকরা প্রবেশ করছে সেই রাস্তা ধরে প্রায় সাত কিলোমিটার মোটরবাইকের দাপাদাপি এলাকার মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
তবে দিনের চেয়ে রাতে মোটরবাইকের গতি লাফিয়ে বাড়ে। তাতে ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটে। বহরমপুর শহরের কুমার হোস্টেলের সামনের রাস্তা থেকে কুঞ্জঘাটা গঙ্গার ধারের রাস্তা নামে পরিচিত। সেখানে মোটরবাইক চলে প্রচণ্ড গতিতে। অনেক ক্ষেত্রে মোটরবাইক আরোহীরা হেলমেট ব্যবহার তো করছেনই না, সেই সঙ্গে অনেকেরই কানে মোবাইল। কথা বলছেন বা গান শুনছেন গাড়ি চালাতে চালাতে। কোনও বাইকে দু'জন বা তিন জন পর্যন্ত রয়েছেন। কৃষ্ণনাথ কলেজ ঘাটের পাশে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, একটা স্পিডব্রেকার রয়েছে। সেটা অতিক্রম করতে অনেক মোটরবাইকই বিপজ্জনকম ভাবে নড়ে উঠছে। কেউ কেউ দ্রুত গতির জন্য নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও গতি কমছে না।
সেই রাস্তা যখন গঙ্গা নদীর দিকে নামছে সেটা ঢালাই দেওয়া এলাকা। উঁচু থেকে নীচে নেমেছে। সেটা দিয়ে বাইক চালিয়ে নামছেন অনেকে। তারপর গঙ্গার ধারের রাস্তা ধরে এগোলে গাড়ির গতি বাড়ছে।
যাঁরা ওই রাস্তা ধরে যাতাযাত করেন তাদের অন্যতম নরহরি মণ্ডল বলেন, "সকালে স্কুলে বাড়ির সন্তানদের নিয়ে যাই। রাতে টিউশন পড়ে তারা ফেরে। দিনের থেকে রাতে বাইকের গতি বেশি। মনের মধ্যে ভয় হয়। যে কোনও সময় যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।" বাসুদেব মিত্র বলেন, "রাস্তার পাশে ফুটপাত রয়েছে। কিন্তু সব ফুটপাত ফাঁকা নয়। ফলে পথচারীদের প্রধান রাস্তা ধরে যেতেই হয়। ফলে মোটরবাইকের দাপাদাপি সহ্য করতেই হয়।" তনুশ্রী সরকার নামের কলেজ ছাত্রীর কথায়, "আজকাল মেয়েরাও স্কুটি নিয়ে ঘোরে। তবে মোটরবাইক সব থেকে ভয়ের। মেয়েরা প্রয়োজনে স্কুটি চালায়। এতে দাপাদাপি করা যায় না।"
জেলা পুলিশ সুপার সুরিন্দর সিংহ বলেন, "রাস্তায় গার্ড রেল দেওয়া রয়েছে। বিভিন্ন ট্রাফিক এলাকায় নানা প্রকার আলো দিয়ে রাস্তা নির্দেশ করা হয়। মানুষকে আরও সচেতন করার কাজও চলছে।"
বহরমপুর পুরসভার পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, "কড়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিরাপত্তা বিষয়ে কোন কাজ থাকলে পুরসভা করবে।"