রাণুর মতো কত জনেরই নেই পরিচয়

রানাঘাট ২-এর বিডিও খোকন বর্মণ গিয়ে হাজির হন রানাঘাটের বেগোপাড়ায় রাণুর বাড়িতে। কিন্তু গিয়ে জানতে পারেন, রাণুর না আছে আধার কার্ড, না ভোটর কার্ড।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০৬:১০
Share:

রাণু মারিয়া মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।

ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসেছিলেন জেলা সংখ্যালঘু দফতরের কর্তারা। যোগাযোগ করেছিলেন বিডিও-র সঙ্গে, যাতে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাওয়া রাণু মারিয়া মণ্ডলের পাশে দাঁড়ানো যায়। পাইয়ে দেওয়া যায় কিছু সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার।

Advertisement

রানাঘাট ২-এর বিডিও খোকন বর্মণ গিয়ে হাজির হন রানাঘাটের বেগোপাড়ায় রাণুর বাড়িতে। কিন্তু গিয়ে জানতে পারেন, রাণুর না আছে আধার কার্ড, না ভোটর কার্ড। কোনও বৈঠক নথিই কার্যত নেই। তাঁকে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া যাবে কী করে? শেষমেশ কৃষ্ণনগরের গির্জা থেকে তাঁর জন্ম শংসাপত্র বার করে পরিচয়পত্র তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়। সংখ্যালঘু দফতর থেকে পরিত্যক্ত মহিলা পুনর্বাসন প্রকল্পের ঘরের পাশাপাশি সমাজকল্যাণ দফতর মাসে সাড়ে সাতশো টাকা করে দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ‘সেলিব্রিটি’ বনে যাওয়া রাণুর না-হয় রাতারাতি সব কিছু হয়ে যাবে। কিন্তু আরও বেশ কিছু মানুষ যাঁদের নানা কারণে ভোটার তালিকায় নাম ওঠেনি, আধার কার্ডও নেই, নেই ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের ন্যূনতম নথিপত্র, তাঁদের কী হবে? জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ায় প্রায় এক লক্ষ মানুষ আছেন যাঁদের বয়স ১৮ বছরের বেশি কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম নেই। ২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৫৫ লক্ষ ৩৬ হাজার। আধার কার্ড আছে ৫৪ লক্ষ ৪ হাজার। আর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ভোটার প্রায় ৪০ লক্ষ ৯৭ হাজার।

Advertisement

অর্থাৎ জেলার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের কাছে আধার কার্ড নেই, নেই ভোটার কার্ড। তাঁদের অনেকেই রাণুর মতো নানা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভবঘুরে, ভিখারি, সাধু-সন্ন্যাসীরাও আছেন সেই না-পরিচিতির তালিকায়।

রাণুর বিষয়টা পরেই প্রত্যাশিত ভাবে উঠে আসছে এই সব প্রশ্ন। কেনান এই ঘটনা ফাঁকফোকরগুলিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সেখানে যেমন কোনও ব্যক্তি মানুষের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি রয়েছে, তেমনই আছে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ও। সেই সঙ্গে দু’টি প্রশ্নও প্রবল ভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে: এক) এ রকম বহু মানুষের কেন নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নেই? দুই) তা না থাকায় কী ধরণের সমস্যা হতে পারে? তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায়ই বা কী?

পরিচয়পত্র না থাকার প্রথম সঙ্কট অবশ্যই বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া। এমনকি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক না হলেও ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড চাওয়া হয়। বেশির ভাগ সরকারি প্রকল্প পেতে গেলে প্রয়োজন হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের। না হলে হয়রান হতে হয় বলে অভিযোগ।

কিন্তু তার বাইরেও উঁকি দিচ্ছে আরও অনেক বড়-বড় বিপদের আশঙ্কা, যেখান থেকে রেহাই পাওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement