প্রতীকী ছবি।
পরিযায়ী শ্রমিক-সহ লকডাউনে কাজ হারানো বিপুল পরিমাণ মানুষের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে জোর দিচ্ছে প্রশাসন। ‘মাল্টিপারপাস জবকার্ড’-এর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু বহু পরিযায়ী শ্রমিকই এখনও কাজ পাননি, তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসছেন।
গত প্রায় দেড় মাস যাবৎ জেলার বিভিন্ন ব্লকের পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ দিনের কাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসেব বলছে, বর্তমানে নদিয়ার মোট ১৮টি ব্লকে প্রতি দিন প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার মানুষ এই প্রকল্পে কাজ করছেন। তার মধ্যে করিমপুর ২ ব্লকে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ২০ হাজার ও করিমপুর ১ ব্লক এলাকায় প্রায় ১২ থেকে ১৪ হাজার মানুষ প্রতি দিন কাজ করছেন।
করিমপুর ২-এর বিডিও সত্যজিৎ কুমার জানান, ওই ব্লকের দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় চার হাজার শ্রমিক অন্য রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে ফিরেছেন। এঁদের ষাট শতাংশের জব কার্ড থাকলেও বাকি প্রায় দেড় হাজার শ্রমিককে নতুন জবকার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগ নিভৃতবাস কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে ১০০ দিনের কাজ করছেন। তবে এখন কিছু জায়গায় বৃষ্টির জল জমে যাওয়ায় মাটি কাটার কাজ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ওই ব্লকেরই নারায়ণপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রিনা খাতুন বিশ্বাস জানান, তাঁর পঞ্চায়েত এলাকার ৫৫২ জন বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতেন। এর মধ্যে শ’পাঁচেক শ্রমিক ফিরে এসেছেন। শ’খানেকের জবকার্ড আগে থেকেই ছিল। বাকিদেরও ইতিমধ্যে নতুন জবকার্ড ও কাজ দেওয়া হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ফিরে ১৪ দিন নিভৃতবাস কেন্দ্রে থাকার পরে এখন ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করছেন থানারপাড়ার হায়তাপাড়ার যুবক সাহিন শেখ। তাঁর কথায়, “লকডাউনে কাজ বন্ধ হওয়ায় বাধ্য হয়েই চলে এসেছি। এখানে সে ভাবে কোনও কাজ নেই। তবে নতুন জবকার্ড হাতে পাওয়ার পরে গত ২০ দিন কাজ পেয়ে আমার সুবিধা হয়েছে।” তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ কাজ পেয়ে যেমন খুশি, অনেকেরই এখনও জবকার্ড কিংবা কাজ না পাওয়ার ক্ষোভ রয়েছে।
নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কিশোরপুরের বাসিন্দা সুধীর মণ্ডল কেরল থেকে ফিরে অন্যের জমিতে কাজ করছেন। তাঁর স্ত্রী মায়ারানি মণ্ডল বলেন, “একটি জবকার্ডে আমার আর ওর নাম রয়েছে। বহু দিন আগে কাজ করলেও এখন আর আমাদের ১০০ দিনের কোনও কাজ দেওয়া হচ্ছে না।” যমশেরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মুক্তাদহ গ্রামের হাবুল শেখেরও আক্ষেপ, গত ২১ মে তিনি ফিরেছেন। দুই সপ্তাহ নিভৃতবাসে কাটার পরেও প্রায় এক মাস হতে চলল। অন্য রাজ্য থেকে গ্রামের ২১ জন ফিরে এসেছেন। তাঁদের জব কার্ড থাকলেও ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হয়নি। কেউ কেউ দিনমজুরের কাজ করলেও অনেকেরই হাতে কাজ নেই।
কাজ না পেয়ে ক্ষোভ রয়েছে হরেকৃষ্ণপুরের স্মরজিৎ বিশ্বাসেরও। তাঁর কথায়, “আমাদের পরিবারে আমার বাবা ও দাদার নামে জবকার্ড থাকলেও আমার নামে নেই। দাদা আর আমি দু’জনেই বাইরে থেকে ফিরেছি। কিন্তু কার্ডে এক জনই কাজ পাবে।“ তাঁর অভিযোগ, “পঞ্চায়েত জানিয়েছে, এখন নতুন জবকার্ড হবে না। এলাকায় ১০০ দিনের কাজ শুরু হবে বললেও এখনও কিছু হয়নি।”
করিমপুর ১-এর বিডিও অনুপম চক্রবর্তী জানান, তাঁর ব্লকে এখনও পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক অন্য রাজ্য থেকে ফিরেছেন। এর মধ্যে হাজার দুই শ্রমিকের জবকার্ড রয়েছে। তাঁদের ফেরার পরে সম্প্রতি আরও দেড় হাজার শ্রমিককে নতুন জবকার্ড দেওয়া হয়েছে এবং পরিযায়ী শ্রমিকেরা কাজও করছেন। বর্তমানে ওই ব্লক এলাকায় প্রতি দিন গড়ে ১৪ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন এবং তাঁদের মধ্যে কম করে ৪০ শতাংশকে কাজ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এখনও যাঁদের কাজ দেওয়া যায়নি তাঁদের নতুন স্কিমে কাজ দিয়ে কাজের হার আরও বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।
আগের ঢিলেঢালা ভাব ঝেড়ে প্রশাসন অনেক বেশি তৎপর হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনও তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। কিছু জায়গায় পঞ্চায়েত স্তরে গরমিলের অভিযোগ উঠছে। সে সব অতিক্রম করে কত দ্রুত কত বেশি সংখ্যক মানুষকে কাজ দেওয়া যায়, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।