রাশেদা বিবি। নিজস্ব চিত্র
দু’বছর আগে বালিরঘাট সেতুর রেলিং ভেঙে ভান্ডারদহ বিলে পড়েছিল সরকারি বাস। আর সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল রাশেদা বিবির দুই ছেলে চালক মিন্টু বিশ্বাস আর সহকারী সেন্টুর। ডোমকলের বক্সিপুর গ্রামে জলঙ্গি নদীর পাড়ে গোটা বিশ্বাস পরিবারটা যেন ভেসে গিয়েছে। তালা বন্ধ বাড়ির উঠোনে গজিয়েছে আগাছা। উইপোকা খেয়েছে পাটকাঠির বেড়া। কেবল বিশ্বাস পরিবার নয়, জেলার এমন অনেক পরিবারের এক মাত্র রোজগেরে মানুষটা হারিয়ে গিয়েছে বালিরঘাটে ভান্ডারদহের জলে।
গরু পুষে ছেলেকে মানুষ করা বিসিএস অফিসার শাফিন বিন রহমানের মা আবার গরু কিনেছেন সংসারের হাল ধরতে। পরিবারের এক মাত্র শিক্ষক সন্তান সুজয় মজুমদারের পরিবার ধুঁকছে সন্তানের শোকে।
বক্সিপুরের বাস চালক ও সহকারী মিন্টু ও সেন্টু বিশ্বাসের পরিবারের আয়ের উৎস বলতে ছিল ওই দুই ভাই। ছেলে ঘরে ফিরলেই হাড়ি বসত উনুনে। বৃদ্ধা রাশেদা বিবি নিজের বাড়ি ছেড়ে এখন থাকেন ইসলামপুরের গোয়াস এলাকায় মেয়ের বাড়িতে। বলছেন, ‘‘আমাদের গোটা পরিবারটাই ভেসে গিয়েছে। বউমারা সন্তানদের নিয়ে চলে গিয়েছে বাপের বাড়ি, আমি ফাঁকা বাড়িটায় আর একা থাকতে পারি না। মাঝে মাঝেই রাতে দুই ছেলেকে স্বপ্ন দেখে ডুকরে উঠি। বাধ্য হয়ে মেয়ের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছি।’’
মঙ্গলবার দুপুরে ডোমকলের আলিনগর গ্রামে নিজের বাড়িতে গরুর গায়ে হাত বুলিয়ে চলেছেন সাফিন বিন রহমানের মা ইসমাতারা ফেরদৌস। আঁচলে চোখের জল মুছে বললেন, ‘‘চাকরি পাওয়ার পরে প্রায় জোর করেই গরুগুলো বিক্রি করিয়েছিল ছেলে। বলেছিল, ‘চাকরি করছি, আর গরু পালনের কোনও দরকার নেই।’’ কিন্তু আবারও যে তাকে সেই গরু ফিরিয়ে আনতে হবে, ভাবেননি ইসমাতারা। পরিবারের একমাত্র সন্তান সুজয় মজুমদারের সাড়ে এগারো মাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি পাওয়ার পরেই নতুন করে আলো দেখতে শুরু করেছিল ডোমকলের শীতলনগর এলাকার মজুমদার পরিবার। সুজয়ের মা মুকুলিকা বলছেন, ‘‘ছেলের হাত ধরে শিরদাঁড়া সোজা করে সবে দাঁড়াচ্ছিল পরিবারটা। ছেলের মৃত্যুতে আমাদের গোটা পরিবারের শিরদাঁড়াটাই যেন ভেঙে গিয়েছে।’’