রক্ত-চক্রে শাস্তি চেয়ে বিক্ষোভ
blood bank

Blood Bank: ব্লাড ব্যাঙ্কেই মদের আসর, ভুয়ো কার্ডও

ইদানীং পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়েছিল যে রক্তদান শিবিরে রক্ত দিয়ে পাওয়া কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:০২
Share:

নড়েচড়ে বসেছে নাগরিক সমাজ।

শুধু রক্তের কালোবাজারিই নয়। প্রায় দিনই সন্ধ্যা নামলে শক্তিনগর ব্লাড সেন্টারে বসত মদের আসরও। তদন্তে অন্তত এমনটাই উঠে আসছে।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তদন্ত কমিটির হাতে একটি ছবি এসেছে যেখানে টেবিলে মদের গ্লাস ও বোতল রেখে ব্লাড ব্যাঙ্কের কয়েক জন কর্মীকে খোশমেজাজে আসর বসাতে দেখা যাচ্ছে। তদন্ত কমিটির এক সদস্যের কথায়, “শক্তিনগর ব্লাড ব্যাঙ্কের এই পরিবেশ আজকের নয়, দীর্ঘদিনের। এত দিন কেউ কিছু না বলায় তা বাড়তে-বাড়তে এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। এর শিকড় উপড়াতে সময় লাগবে।”

নদিয়ার এই অন্যতম প্রধান ব্লাড ব্যাঙ্কে কর্মীদের একাংশের দালাল-চক্র ও কালোবাজারিতে যুক্ত থাকার খবর প্রকাশ্যে আসার পর নড়েচড়ে বসেছে নাগরিক সমাজ। মঙ্গলবার হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা সংগঠন এবং নদিয়া জেলা রক্তদান শিবির আয়োজক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান হয়। তাতে যোগ দেন শহরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যেরা। রক্ত নিয়ে কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত কর্মীদের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানিয়ে তাঁরা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। পরে সেখান থেকে মিছিল করে গিয়ে জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠীর কাছেও একই দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়।

Advertisement

বছর কয়েক আগেও দালাল চক্রের হদিস মিলেছিল শক্তিনগর ব্লাড ব্যাঙ্কে। তখনও কয়েক জন কর্মীকে চিহ্নিত করা হয়, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তবে দালাল-চক্র ঠেকাতে দুপুর ২টোর পর হাসপাতালের সুপারের অনুমতি ছাড়া নার্সিংহোমগুলিকে রক্ত দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশিকা জারি করা হয়। এ-ও বলা হয়েছিল যে, প্রতি দিন মজুত রক্তের হিসাব প্রকাশ্যে আনতে হবে। কোন গ্রুপের কত প্যাকেট রক্ত আছে তা ইলেট্রনিক্স ডিসপ্লে-র মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। প্রথম প্রথম কিছু দিন সেই সব নির্দেশিকা মেনে চলা হলেও পরে ফের পুরনো মৌরসিপাট্টাই ফিরে আসে। স্বাস্থ্য দফতর থেকে নাগরিক সমাজের অনেকের মতেই, যথাযথ নজরদারির অভাবেই এমনটা হয়েছে।

ইদানীং পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়েছিল যে রক্তদান শিবিরে রক্ত দিয়ে পাওয়া কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বলে দেওয়া হচ্ছিল, রক্ত মজুত নেই, রক্ত পেতে হলে রক্তদাতা সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।

স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে তদন্তে নেমে এখন কর্তারা জানতে পারছেন যে রক্তের কার্ড নিয়েও বড়সড় দুর্নীতি হচ্ছিল। সূত্রের দাবি, ব্লাড ব্যাঙ্কে নকল কার্ড তৈরি করে কাখা হত। দরকারে সেই নকল কার্ড জমা দিয়ে দালালেরা রক্ত নিয়ে যেত। এমনকি ব্যবহার না হওয়া আসল কার্ডও দিয়ে রাখা হত দালালদের কাছে। প্রকৃত রক্তদাতারা রক্তদানের কার্ড দিয়ে রক্ত না পেলেও দালালেরা নকল বা ভুয়ো কার্ড জমা দিয়ে রক্ত ঠিকই পেয়ে যাচ্ছিল।

সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের কথোপকথনের অডিয়ো ক্লিপেও (আনন্দবাজার ওই সব ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি) এই বিষয়টি উঠে এসেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি।

এক কর্তার কথায়, “তদন্ত এখনও অনেকটাই বাকি। এর পরে আর কী কী জানা যাবে, ভাবতেই ভয় করছে।” নদিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপনকুমার দাস বলেন, “তদন্তে অনেক কিছুই উঠে আসছে। তবে তদন্তের স্বার্থেই এখন সেই সব বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement