কিছু মানুষকে কোনও ভাবেই সচেতন করা যাচ্ছে না। কখনও লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য দেওয়ার পরেই রিপোর্টের তয়াক্কা না করে তাঁরা সকলের সঙ্গে মিশতে শুরু করছেন, কখনও রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে কোয়রান্টিন কেন্দ্র বা হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে আসছেন। এতে নিজের পরিবার, পাড়া বা এলাকায় সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এই বোধ তাঁদের কাজ করছে না। ঠিক এই ভাবেই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হল। বাড়ি যাওয়ার পর তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ এল। ঘটনা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
দিন তিনেক আগেই রিপোর্ট হাতে না-আসা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক। সেই দিনই তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসায় জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ একাধিক স্বাস্থ্য কর্তাকে হোম কোয়রান্টিনে যেতে হয়েছে। আবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রশ্ন ওঠা শুরু করেছে।
শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল সূত্রের খবর, ডায়রিয়া ও শরীরে যন্ত্রণা নিয়ে ১৫ জুলাই শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসে কৃষ্ণনগরের চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওই যুবক। তিনি শ্বশুরের শ্রাদ্ধ উপলক্ষে কলকাতায় গিয়েছিলেন ৬ জুলাই। ৮ জুলাই ফিরে আসেন। প্রথম দিকে তাঁর তেমন কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু ১৪ জুলাই থেকে তাঁরপেট খারাপ হয়। সঙ্গে সামান্য গা ব্যথা। পরদিন তাঁকে আউটডোরে নিয়ে যাওয়া হলে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে নেওয়া হয়।
এর পর তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়। রবিবার তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এর পরই শুরু হয়ে যায় প্রশাসনিক তৎপরতা। সোমবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্লোকাল কোভিড হাসপাতালে। ওই যুবকের বাবা ও মা শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সাফাই কর্মী হিসাবে কর্মরত। বাবার কথায়, “আমরাও বুঝতে পারছি না কেন আমার ছেলেকে রিপোর্ট আসার আগেই ছেড়ে দেওয়া হল।”
চিকিৎসক বিনোদ দাসের অধীনে ওই যুবককে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আসলে ওই যুবকের করোনার কোনও উপসর্গ ছিল না। এমনিতেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা কম। সেখানে উপসর্গহীনদের ভর্তি রাখলে উপসর্গযুক্ত করোনা রোগীদের আমরা জায়গা দিতে পারব না। সেই কারণেই সরকারি গাইড লাইন মেনে ওই যুবককে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছিল।”
উপসর্গ না থাকলে প্রথমে কেন তাঁকে আইসোলেশনে ভর্তি করা হল? তাতে চিকিৎসকের জবাব, “আউটডোরের রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া পুরোপুরি শুরু হয়নি বলেই তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল নমুনা সংগ্রহের জন্য।” জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি ঠিক কী ঘটেছে।”
কৃষ্ণনগরের এ দিন আরও এক জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। তিনি কলকাতায় সরকারি বাসের কন্ডাক্টর ছিলেন। দিন কয়েক আগে বাড়ি ফিরেছেন। জ্বর আসায় তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই রবিবার রাতে তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে।