প্রতীকী ছবি
ভিন রাজ্যে আটকে পড়া ছেলেকে ঘরে ফেরাতে ‘বুড়োকে’ বিক্রি করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না তেঁতুল সর্দারের! বুড়ো তাঁর বাড়ির পোষ্য ছাগল। সন্তানতূল্য। কিন্তু অতি কঠিন সময়ে বৃদ্ধ নিরুপায়। চোখের জলে ভেসে সেই পোষ্যকে বেচেই টাকা পাঠালেন ছেলেকে। সেই টাকায় সাইকেল কিনে এবং চালিয়ে নাগপুর থেকে নবদ্বীপে ফিরেছেন সন্ত সর্দার।
ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে আরও অনেকের সঙ্গে আটকে পড়েছিলেন নবদ্বীপের চন্দ্রকলোনির বাসিন্দা তেঁতুল সর্দারের ছেলে সন্ত। ছেলেকে ফেরাতে আর কোনও উপায় না পেয়ে প্রিয় পোষা ছাগল ‘বুড়ো’ এবং তার এক সঙ্গীকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন তেঁতুল সর্দার। সেই টাকা হাতে পেয়ে নতুন সাইকেল কিনে নাগপুর থেকে নবদ্বীপে ফিরতে সন্তকে একুশ দিন সাইকেল চালাতে হয়েছে।
নবদ্বীপ শহরের একেবারে শেষপ্রান্তে বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশন লাগোয়া এক নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্র কলোনি। ছোট্ট দেড় কামরার টিনের ঘরে থাকেন তেঁতুল সর্দার এবং তাঁর পরিবার। পেশায় ভ্যানচালক তেঁতুল সর্দার জানান, গত মাঘ মাস থেকে মহারাষ্ট্রে ছিল ছেলে। লকডাউনের প্রথম কিছু দিন নাগপুরে যাঁর কাছে কাজ করছিল সেখানকার মালিক মাইনে না-দিলেও খাওয়ার খরচ দিয়েছিলেন। তার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ছেলে বাড়ি ফিরতে চায়। বাড়ি থেকে টাকা না পাঠালে না খেয়ে মরতে হত।
ছেলের ওই অবস্থা শুনে ছাগল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তেঁতুল। বলেন, “আমি ভ্যান চালাই। দু’ মাস ঘরে বসা। টাকা আর কোথায় পাবো। তাই তিনটি পোষা ছাগলের মধ্যে দু’টো বিক্রি করে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলাম। বুড়োর জন্য সবচেয়ে মন কেমন করছে।”
সাইকেল কিনে মাত্র এক হাজার টাকা সম্বল করে গত ৫ মে নাগপুর থেকে সন্তু ও তাঁর আরও কয়েক জন বন্ধু রওনা দেন। বুধবার সন্ধ্যায় পৌঁছোন নবদ্বীপে। তার পর নিজেই নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চলে যান। সেখানে তাঁকে পরীক্ষা-করার পর পাঠানো হয় নবদ্বীপ বকুলতলা উচ্চ-বিদ্যালয়ের কোয়রান্টিন সেন্টারে।