প্রতীকী ছবি।
শান্ত, মার্জিত স্বভাবের মানুষটি যে এমন কাণ্ড ঘটাতে পারেন তা তাঁর বাড়ির লোকের পাশাপাশি পাড়ার লোকও ভাবতে পারছেন না।
নাকাশিপাড়ার নাগাদি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা ইয়াকুব বিশ্বাস (৩৬) বিবাহিত। দুই সন্তানের বাবা। দিনমজুরি করতেন। অবসর পেলে মৌচাক ভেঙে মধু বিক্রি করে সংসার চলত। কোনওকিছুর সাতেপাঁচে ছিলেন না। এমন লোক একই রাতে পাঁচ জনকে ছুরি দিয়ে কুপিয়েছেন এ কথা গ্রামের কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার ওই ঘটনায় গোটা কল্যাণী শহর জুড়ে হইচই পড়ে যায়। প্রথমে কল্যাণী মেন স্টেশনে জিআরপি-র এক কনস্টেবল ও এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে ছুরি মেরে গুরুতর জখম করেন তিনি। এর পর কল্যাণী আইটিআই মোড়ের কাছে তিন জনকে এলোপাথারি কুপিয়ে শেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। আহত পাঁচ জনেরই চিকিৎসা চলছে।
ইয়াকুবের বাবা কাদের বিশ্বাস বুধবার গ্রামের বাড়িতে বসে বলেন, ‘‘আমর ছেলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। গ্রামের সবাই জানে ও শান্ত স্বভাবের। কোথা থেকে কী যে হল, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ ইয়াকুবের মানসিক স্থিতি ঠিক নেই বলে মঙ্গলবার পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছিল। যদিও এ ব্যাপারে জিআরপি এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে গত ২৭ মার্চ ইয়াকুবের ছোট ভাই তাবির বিশ্বাসকে কল চুরির অভিযোগে গ্রামের কিছু লোক তাঁর সামনেই মেরেছিলেন। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই ভাই এখনও জেলেই আছে। এই ঘটনায় ইয়াকুব মানসিক ভাবে খুবই ধাক্কা খেয়েছিলেন বলে পরিবারের লোকেদের দাবি।
পরিবারের কথায়, ওই ঘটনা মেনে নিতে পারেননি ইয়াকুব। ঘটনার পর থেকেই অনেক পরিবর্তন দেখা যায় তাঁর মধ্যে। চুপচাপ হয়ে যান। তার পর হঠাৎ ২ এপ্রিল বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। অনেক জায়গায় খোঁজখবর করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। শেষে মঙ্গলবার রাতে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন যে ছুরি মেরে ৫ জনকে কোপানোর জন্য ইয়াকুবকে পুলিশ ধরেছে।
প্রিয়জনের হেনস্থা দেখে সাময়িক ভাবে মানসিক স্থিতি নষ্ট হতে পারে বলে জানাচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরাও। মনোচিকিৎসক সুজিত সরখেলের কথায়, ‘‘এই রকম অবস্থাকে ‘অ্যাকিউট সাইকোসিস’ বলা হয়। আচমকা মারাত্মক ধরনের শক বা ট্রমা বা মানসিক ধাক্কা থেকে মানসিক ভারসাম্য কিছু সময়ের জন্য চলে যেতে পারে। আবার অনেকেই মাসখানেকের মধ্যে ঠিক হয়ে যান। অনেকে আবার কোনও ওষুধ ছাড়া এমনিই ট্রমা কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক হন।’’।
জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণী জিআরপিতে ইয়াকুবের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা হয়েছে। তাঁর অস্ত্রটি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জেরায় ইয়াকুব তাঁর কোথায় বাড়ি, কী নাম, সবই ঠিক বলেছেন। কিন্তু যখনই তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে যে, তিনি কেন ৫ জনকে ছুরি দিয়ে জখম করলেন, তখনই তিনি উত্তর দিচ্ছেন,‘জানি না’।
বুধবার তাঁকে রানাঘাট কোর্টে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন এবং টি.আই প্যারেডের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।