মমতার সঙ্গে তাঁর স্বামী। নিজস্ব চিত্র।
বিভিন্ন সময় নারী শক্তির আরাধনায় মাতে বাঙালিরা। ৮ মার্চ নারী দিবস পালনও করা হয় বিভিন্ন জায়গায়। সমাজমাধ্যম জুড়ে চলে পোস্ট, লেখালেখি। কিন্তু এখনও সামাজিক নানা অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে নারীকে। তবু শক্তি, ধৈর্যকে সম্বল করে ঘুরে দাঁড়ানোর উদাহরণও কম নয়। কথায় আছে যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। নারী দিবসে তেমনই এক নারীর খোঁজ মিলল তেহট্টের বিনোদনগরে।
সালটা ছিল ২০০৪, মমতা সরকারের তখন সদ্য কিশোরী। বয়স চোদ্দো। নবম শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়েছে সবে। সেই সময়েই নিজেদের আত্মীয়র সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিবাদের শিকার হয় মমতা। কাকার ছোড়া অ্যাসিডে ক্ষতবিক্ষত হয় তার চেহারা। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু ওই ঘটনার পর আর বাড়ির বাইরে যেতে সাহস পেতেন না তিনি। যে কারণে দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান মমতা। উৎসব-আনন্দ কোনও কিছুতেই তাঁর উৎসাহ ছিল না। তবে সমাজের দুষ্টশক্তিকে পরাজিত করতে যেমন দেবীদুর্গার আবির্ভাব হয়েছিল। তেমনই জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর তাগিদ থেকেই সাহস সঞ্চয় করেছিলেন মমতা।
মমতা জানান, দীর্ঘ বারো বছর পর কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে চলতে থাকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। তবে সেই লড়াইও খুব সহজ ছিল না। ছিল বিদ্রূপ, উপহাস। কিন্তু সে সব পিছনে ঠেলে সমাজের সাথে পা মিলিয়ে নিতে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন মমতা। সেই জেদের কাছে হার মানে সমাজ। কর্মস্থলেই আলাপ উত্তরাখন্ডের বাসিন্দা লাকি সিংহের সঙ্গে। মমতার লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে নিজের বাড়ি ছাড়তেও দ্বিধা করেননি লাকি। ২০২০ সালের মার্চে বিনোদনগরের বাড়িতে চারহাত এক হয়। এরপর জীবন যেন আরও পাল্টে যায় মমতার। বর্তমানে এক বছরের এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে দিব্যি সংসার করছেন তাঁরা। পাশাপাশি তেহট্ট মহকুমা কার্যালয়ে কর্মরত তিনি।
মমতার কথায়, ‘‘ওই দুর্ঘটনার পর এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি যে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এক সময় ভাবলাম, এভাবে আর নয়, ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। বহু বছর পর প্রতিষ্ঠিত হয়ে এখন সংসার করছি।” তবে একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ‘‘নারী দিবস পালিত হোক নারী জাতিকে সম্মানের মধ্যে দিয়ে। যাতে মেয়েরা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।”