ফিরোজ আহমেদ। নিজস্ব চিত্র
আঙুল গলে আংটিটা খুলে গিয়েছিল প্রধান শিক্ষকের। তবে সেটা বুঝতেই পারেননি তিনি। আর তাই সন্দেহের ছায়াটা গিয়ে পড়েছিল স্কুলের এক পড়ুয়ার উপরে।
জিজ্ঞেস করায় খারিজি মাদ্রাসার প্রথম পর্যায়ের সেই ছাত্র, বছর বারোর ফিরোদ আহমেদ অস্বীকার করতেই শুরু হয়েছিল প্রহার। অভিযোগ, বুধবার সকালে ক্লাস ঘর বন্ধ করে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয় বটে তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই চালের বস্তা থেকে উদ্ধার হয় সেই সোনার আংটি।
শিক্ষক দিবসের আগে হাতের তেলো থেকে কনুই, পিঠ এমনকি বুকের উপরে অজস্র আঘাত নিয়ে ফিরোজ বলছে, ‘‘স্যরকে বহু বার বললাম, আমি নিইনি। যত বলছি তত মারছেন। তিন-তিনটে কঞ্চি ভেঙে ফেললেন স্যর!’’
শিক্ষকের এমন নির্দয় আচরণের বিরুদ্ধে গ্রামের মানুষ শুধু ফুঁসছেন না, বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার ওই প্রধানশিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে জলঙ্গি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তও শুরু হয়েছে, প্রয়োজনে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হবে।
ঘটনার পরে অবশ্য অনুতপ্ত রফিকুল ইসলাম বলছেন, ‘‘আমারই ভুল, বড় ভুল। ক্ষোভের বশে শাসন করতে গিয়েই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। ঘটনার জন্য আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’’
এ কথা অবশ্য মুখেই বলেছেন তিনি। ওই ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া দূরে থাক, তার পরিবারের সঙ্গে দেখাও করেননি তিনি। ক্ষোভ জমেছে তা নিয়েই।
রফিকুল বলছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাতে ওই এলাকায় আমার পক্ষে এখনই যাওয়া সম্ভব নয়। নজর রাখছি, উত্তেজনা খানিক কমলেই ওই ছাত্রের পাশে দাঁড়াব আমি।’’
এ কথায় অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। শুধু ফিরোজ নয়, গ্রামের মানুষজন এককাট্টা হয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, এমন ব্যবহারের বিহিত চাই!
মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির সদস্য আমজাদ শেখের কথায়, ‘‘আমরা ওই সময়ে কেউই মাদ্রাসায় ছিলাম না, ফলে কেন এমন কাণ্ড করলেন বুঝতে পারছি না। ঘটনার পর থেকে প্রধান শিক্ষককে ফোনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তবে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমরাও ব্যবস্থা নেব।’’
গোটা শরীরে কালশিটের দাগ, চামড়া ছিঁড়ে রক্ত ঝরছে পিঠে। ভাদ্রের দুপুরে চাদর মুড়ি দিয়ে কাতরাচ্ছে ফিরোজ। মা-হারা ফিরোজকে দেখে হা-হুতাশ করছেন আত্মীয় থেকে প্রতিবেশীরা। ফিরোজের দাদা ফারুখ শেখ বলছেন, ‘‘ভাবতে পারেন, তিনটে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে দফায়-দফায় মারধর করা হয়েছে। আতঙ্কে ও আর মাদ্রাসায় যেতেই চাইছে না।’’