—প্রতীকী চিত্র।
জাকির হোসেনের জঙ্গিপুর বিধানসভার দখল নিল বিজেপি। ৫৪ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জঙ্গিপুর বিধানসভায় ২০২১ সালে জাকির হোসেন বিধানসভায় জয়ী হন ৯২৪৮০ ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে। ২০১৬ সালে জাকির জঙ্গিপুরে জেতেন সিপিএম ও কংগ্রেস জোটের বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের সুযোগ নিয়ে। সেখানে জাকির পান ৬৬ হাজার ভোট, অন্যদিকে সিপিএম ও কংগ্রেস জোটের সম্মিলিত ভোট ছিল ৮১০৯৯ ।
এ বারে রাজ্য জুড়ে যখন তৃণমূলের এত বাড়বাড়ন্ত, ঠিক তখনই তৃণমূল কেন জোর ধাক্কা খেল জঙ্গিপুরের বিধায়ক তথা জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার দলের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের খাস তালুকে, তা দল খতিয়ে দেখবে।
৮টি অঞ্চল ও জঙ্গিপুর পুরসভা মিলিয়ে ৩২৬৬ ভোটে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে রয়েছে এই কেন্দ্রে বিজেপি, যা অতীতে কখনও ঘটেনি। তৃণমূল সেখানে রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। তৃতীয় স্থানে কংগ্রেস জোট প্রার্থী। তৃণমূল জোট প্রার্থীর থেকে এখানে প্রায় ১৬৪০০ ভোটে এগিয়ে থাকায় সামগ্রীক হিসেবে জোর ধাক্কা খেয়েছে কংগ্রেস।
জঙ্গিপুর লোকসভার মধ্যে পড়ে যে ৭টি বিধানসভা তারই একটি জঙ্গিপুর বিধানসভা। রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের ৬টি অঞ্চল, সুতি ১ ব্লকের ২টি অঞ্চল ছাড়াও জঙ্গিপুর পুরসভার দুই শহর রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুর নিয়ে জাকিরের জঙ্গিপুর বিধানসভা এলাকা। জাকিরের দাবি ছিল তাঁর বিধানসভায় তৃণমূল বিজেপিকে ১৫ হাজার এবং কংগ্রেসকে প্রায় ২৫ হাজার ভোটে পিছনে ফেলে এগোবে। কিন্তু ভোটের ফলে এ বারে জোর ধাক্কা খেয়েছেন জাকির।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মির্জাপুরে ১৬৬০, দফরপুরে ৮০০, কানুপুরে ১৪০০ এবং রানীনগরে ২৩৭৪ ভোটে এগিয়ে থেকেছে তৃণমূল। কিন্তু রঘুনাথগঞ্জের জামুয়ার, জরুর এবং সুতির আহিরণ ও বংশবাটীতে একচেটিয়া ‘লিড’ পেয়ে এগিয়েছে বিজেপি।
তৃণমূলের বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়েছে জঙ্গিপুর পুর এলাকা। রঘুনাথগঞ্জে ব্যাপক ‘লিড’ নিয়ে এগিয়েছে বিজেপি, জঙ্গিপুর শহরে একই ভাবে এগিয়েছে কংগ্রেস। ২১টি ওয়ার্ডের পুরসভায় রঘুনাথগঞ্জ শহরে ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টিতেই এগিয়েছে বিজেপি। জঙ্গিপুরের তৃণমূল পুরপ্রধানের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে সাড়ে তিন হাজার ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৬৮ ভোট বেশি পেয়েছে তৃণমূল। জঙ্গিপুর শহরে ১৩টির মধ্যে তিনটি ওয়ার্ডে বিজেপি, ৯টি ওয়ার্ডে কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে। শুধু ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র ৭৭টি ভোট বেশি পেয়েছে তৃণমূল।
কেন এই হার? রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি গৌতম ঘোষ জাকিরের হয়ে নির্বাচন পরিচালনার মূল কাণ্ডারী। তিনি বলেন, “যে দু’টি অঞ্চল সুতি ১ ব্লকের মধ্যে পড়ে তৃণমূলের ভরাডুবি ঘটেছে সেখানে।”
সুতি ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি সেরাজুল ইসলাম বলেন, “আমার এলাকায় পড়ে ৬টি অঞ্চল, তার দু’টি পড়ে জঙ্গিপুর বিধানসভায়। আমাকে বলা হয়েছিল ওই দুই অঞ্চল বিধায়ক ও ওই ব্লকের দলের সভাপতি নিজেরাই দেখবেন।”
জাকির অবশ্য বলছেন, “দল সমস্ত এলাকার ভোট প্রাপ্তি নিয়ে বিশ্লেষণ করবে। তখনই সামনে আসবে সব তথ্য। জানা যাবে, কাদের বিরোধিতায় বিজেপির এই উত্থান। তবে জঙ্গিপুর কেন্দ্রে কংগ্রেসের চেয়ে তৃণমূল ১৬ হাজারেরও বেশি লিড পেয়েছে এটা বড় কথা।”