ব্যালট নয়, ভ্যানো বুবু ভোট দিলেন হ্যারিকেনে

কারও কাছে তিনি ভ্যানো আপা, কারও কাছে ভ্যানো ফুফু, তার পরে বয়স হলে ভ্যানো নানি!  সেই ভ্যানোর ইন্তেকাল হয়েছে। কিন্তু ভোট এলেই মুখে মুখে ঘোরে ভ্যানোর নাম।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৫৮
Share:

ছেলেবেলায় তিনি নাকি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে খুব কান্নাকাটি করতেন। তাই দাদি আদর ও বিরক্তির মিশেলে নাম রেখেছিলেন ভ্যানো। শুধু বাড়িতেই নয়, তামাম পাড়াও তাঁকে সেই ভ্যানো নামেই চিনত। কারও কাছে তিনি ভ্যানো আপা, কারও কাছে ভ্যানো ফুফু, তার পরে বয়স হলে ভ্যানো নানি! সেই ভ্যানোর ইন্তেকাল হয়েছে। কিন্তু ভোট এলেই মুখে মুখে ঘোরে ভ্যানোর নাম। আর তাঁর ভোট দেওয়ার গল্প। চায়ের দোকান থেকে মাচা-চর্চা ভোটের আলোচনা মানে ভ্যানো থাকবেনই থাকবেন! কিন্তু গ্রামের একেবারে আটপৌরে এই মহিলাকে নিয়ে এত গল্প কেন?

Advertisement

গল্পটা বলতে গিয়ে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছেন আব্দুর রসিদ মণ্ডল। তিনি জানাচ্ছেন, সে সময় ভোট মানে উৎসব। সন্ধ্যা হলেই বাড়ি বাড়ি যাওয়া। বিরোধীরা কোন বাড়িতে ঢুকছে, শাড়ি-লুঙ্গি দিচ্ছে কি না তা গোয়েন্দার মতো খবর রাখতে হত। আর কী ভাবে ভোট দিতে হবে সেটি ভোটারদের পাখি পড়ানো করে বুঝিয়ে দেওয়া ছিল তাঁদের কাজ। ভ্যানোকেও সেই মতো শিখিয়ে-পড়িয়ে ভোট দিতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু চট দিয়ে ঘেরা ঘরে গিয়ে পুলিশ আর চশমা পরা বাবুদের দেখে তাঁর সব ঘেঁটে ঘ হয়ে গিয়েছিল। ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাঁর পা কাঁপছে, কপালে বিনবিন করছে ঘাম।

আর তাঁর কপালে ঘাম দেখেই ঘিরে ধরে দলের কর্মীরা। তাঁরা আঁচ করেন, ভ্যানো কিছু একটা গন্ডগোল করেছেন। তাঁরা সটান জানতে চান, ‘‘ভ্যানো বুবু, ভোটটা কোথায় দিয়েছ ঠিক করে বলো তো?’’ ‘‘ঠিকঠাক দিয়েছি’’ বলে পাশ কাটাতে চাইলেও নাছোড় ছেলেপুলেরা। শেষে ভ্যানো বাধ্য হয়ে বলেন, ‘‘কোথায় আর দিব, ভিতরে ঢুইকি দেখনু টেবিলডার উপরে হরকেল (হ্যারিকেন) রাখা। ওয়ার মাথাতেই দিলুম ছাপ!’’ আকাশ ভেঙে পড়ল কর্মীদের মাথায়। ভ্যানোও মনখারাপ করে বাড়ি ফিরলেন। আর তার পর থেকে গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল ভ্যানোর ভোট দেওয়ার গল্প।

Advertisement

ভ্যানো একা নন, হ্যারিকেন নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়েছিলেন ইসলামপুরের দুখু দাই। সে আমলেও ভোটারদের প্রভাবিত করতে কারণের চল ছিল। দুখুও পেয়েছিলেন। তার পরে বেশ আনন্দের সঙ্গে পুরো একটা দিশির বোতল শেষ করে বুথে ঢুকেছিলেন ভোট দিতে। টলতে টলতে চটের ঘরে পৌঁছে নিভিয়ে ফেলেন হ্যারিকেন। ব্যালট ফেলে গামছায় হ্যারিকেন জড়িয়ে বুথ থেকে হাওয়া। পরের ভোটার ভোট দিতে গিয়েই জোর হট্টগোল। তাঁর চিৎকারে ভোটকর্মী, পুলিশ ছুটে এসে দেখেন, হ্যারিকেন উধাও। প্রিসাইডিং অফিসারের চোখে জল। শেষে পাড়ার মাতব্বরেরা জানতে পারেন দুখু কিছু একটা বগলদাবা করে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন। শেষে তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় সেই হ্যারিকেন। ইসলামপুরের বাসিন্দা ধীমান দাসের কথায়, ‘‘শুনেছিলাম মত্ত অবস্থায় হ্যারিকেন দেখে দুখুর মনে হয়েছিল রাত হয়েছে। ফলে হ্যারিকেন নিভিয়ে সে শুয়ে পড়েছিল।’’

তবে ভোটের হ্যারিকেন নিয়ে হাজারও কাণ্ড থাকলেও রানিনগরে আসা ভোটকর্মীদের একেবারে হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দিয়েছিলেন পাঁচু। তিনিও দিশির প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে হ্যারিকেন নিভিয়ে টেবিলের তলায় শুয়ে পড়েছিলেন। এ দিকে ভোটারের লাইন লম্বা হচ্ছে। শেষে চট টেনে দেখা যায় পাঁচু উধাও। খোঁজ খোঁজ রব উঠল। শেষে পাশের টেবিল থেকে হ্যারিকেন এনে দেখা মেলে তাঁর। ততক্ষণে তিনি নিশ্চিন্তে এক ঘুম দিয়ে ফেলেছেন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement