‘দুয়ারে চেকআপ’ এর প্রচার। নিজস্ব চিত্র।
টিম পিকে-র সাহায্য ছাড়াই ‘স্বনির্ভর’ হচ্ছে তৃণমূল! নিচু তলার নেতা-কর্মীরাই দলীয় কর্মসূচির নাম দিচ্ছেন ‘দুয়ারে সহায়তা ও খোঁজখবর’, ‘দুয়ারে চেকআপ’, কিংবা ‘অন্নপূর্ণা আহার’। কর্মীদের ভাবনায় জনমুখী কর্মসূচিও চলছে।
এই ছবি দেখা যাচ্ছে জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে। লোকসভা ভোটের পরে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার সঙ্গে দিক নির্দেশে বিধানসভা ভোটে সাফল্য মিলেছে। টিম পিকে-র ভাবনাতেই ‘দিদিকে বলো’, ‘বাংলার গর্ব মমতা’, ‘তফসিলি সংলাপ’, ‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’, ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’-এর মতো নানা দলীয় কর্মসূচি হয়েছে। ভোটকুশলীর সংস্থার পরামর্শে বিধানসভা ভোটের আগে সরকারি ভাবে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিটিও বিশেষভাবে সফল হয়েছিল। ইয়াসের ক্ষতির পরে সরকারি ভাবে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ও চলছে। তবে বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে টিম পিকে-র তরফে এখনও নতুন দলীয় কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। তবে গত দু’বছর এই সংস্থার তদারকিতে নানা কর্মসূচি করে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে নিচুতলার নেতা-কর্মীদেরও। তার ভিত্তিতেই নিজস্ব ভাবনায় জনমুখী কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁরা।
জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতো বলছেন, ‘‘এলাকা-ভিত্তিক স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ভাবনায় ও শিরোনামে এমন কর্মসূচি অন্য এলাকার কর্মীদেরও উৎসাহিত করছে। ‘দুয়ারে সহায়তা ও খোঁজখবর’ কর্মসূচিটি গ্রামীণ এলাকাতেও করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘টিম পিকে-র তদারকিতে দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মীরা কী শিখেছেন, বস্তুতপক্ষে সেটা পরখ করতেই কর্মীদের ভবনাকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই মতো পরীক্ষামূলক কয়েকটি কর্মসূচি হচ্ছে।’’ ওই নেতা জানাচ্ছেন, এলাকাভিত্তিক কর্মসূচি সফল হলে অন্য এলাকার কর্মীরাও সেগুলি রূপায়িত করবেন। এ ভাবে সংগঠন পোক্ত করার ক্ষেত্রে মতের আদানপ্রদানে নিচুতলার নেতা-কর্মীদের চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রটাও প্রসারিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
জেলার চারটি বিধানসভাতেই বড় জয় পেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু তারপরেও তৃণমূলের একাংশ বলছেন, বিধানসভা আর পুরভোট কিংবা পঞ্চায়েত ভোট এক নয়। করোনা তাই মাটির সঙ্গে নিবিড় যোগ রাখতে এখনই জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন নেতা-কর্মীদের একাংশ। তৃণমূলের এক সূত্রের খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর থেকে জেলার নেতাদের জানানো হয়েছে, জনসংযোগে কোনও খামতি রাখা যাবে না। সেই মতো নিচুতলার কর্মীদের ভাবনাতেই নানা কর্মসূচি হচ্ছে।
সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির উদ্যোগে তিন দিনের ‘দুয়ারে সহায়তা ও খোঁজখবর’ কর্মসূচি হয়েছে। কৌশিক মজুমদার, বিল্লু দত্ত, মমতা প্রতিহার, সোমা হেমব্রমের মতো স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের পরিকল্পনায় ওই কর্মসূচিতে এলাকাবাসীর সমস্যা, উন্নয়নের দাবি শোনার পাশাপাশি গরিব বাসিন্দাদের তিনদিন ধরে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির শিরোনামটি দেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী মমতা প্রতিহার। ২০১৩ সালে বাংলায় এমএ পাশ মমতা বলছেন, ‘‘ভোটের পরেও মানুষের খোঁজখবর নেওয়া প্রয়োজন। তাই আমরা সবাই মিলে ওই কর্মসূচি করেছি। পিকে টিমের ‘দুয়ারে’ শব্দটির সঙ্গে ‘সহায়তা ও খোঁজখবর’ জুড়ে নামকরণ করেছি।’’
কার্যত লকডাউনের দিনগুলিতে (২ থেকে ১৫ জুন) তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম শহরের অংসগঠিত ক্ষেত্রের গরিব মানুষজনকে রাতে রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে। আইএনটিটিইউসি-র জেলা নেতা গৌরাঙ্গ প্রধান ও তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য রিংকা মুখোপাধ্যায়ের ভাবনা প্রসূত ওই কর্মসূচির নাম ‘অন্নপূর্ণা আহার’। রিংকা বলছেন, ‘‘শিরোনামে কর্মসূচির উদ্দেশ্য বোঝানোর চেষ্টা করেছি।’’
জেলা টিএমসিপি-র ‘সবুজ সেনা’দের উদ্যোগে আবার অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষজনের জন্য ‘দুয়ারে চেকআপ’কর্মসূচি শুরু হতে চলেছে। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি আর্য ঘোষ জানাচ্ছেন, সংগঠনের সদস্যদের ভাবনায় ও শিরোনামে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র মানুষজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসকদের পরামর্শদান কর্মসূচি হবে বৃহস্পতিবার থেকে।