Terrorist Arrest

তিন জনের গ্রেফতারে ত্রস্ত এলাকা

শাব বাংলাদেশ থেকে এসে প্রথমে উঠেছিল নওদার দুর্লভপুরে। সেখানেই সে ভোটার কার্ডও তৈরি করে।

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শাদ রাডি বা শাব শেখ, মিনারুল শেখ ও আব্বাস আলি জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতারের পরে প্রশ্ন উঠেছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আরও কোনও সদস্য এলাকায় রয়েছে কি না। গোয়েন্দারা এলাকার উপরে গোপনে নজর রাখছে, এমন কথাও স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফিরছে। তবে হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, ‘‘কে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত, তা পুলিশ প্রশাসন তদন্ত করুক।’’

Advertisement

তবে এলাকার মানুষ ত্রস্ত। নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করা হবে কি না, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। নওদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে এসে এলাকায় বসবাস করছিল এক ব্যক্তি। এখন জানতে পারছি সে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত। ফলে এলাকায় মানুষ এখন ভীত।’’

শাব বাংলাদেশ থেকে এসে প্রথমে উঠেছিল নওদার দুর্লভপুরে। সেখানেই সে ভোটার কার্ডও তৈরি করে। দুর্লভপুরের বাসিন্দা পিন্টু শেখ বলছেন, ‘‘ওই যুবককে আমরা এলাকায় দেখতাম। ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি ও জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত। এখন জানতে পারছি ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবই তৈরি করেছে। সে সব জেনে এলাকায় মানুষ অনেকেই ভয় পাচ্ছেন।’’

Advertisement

শাব পরে হরিহরপাড়ার কেদারতলায় কাকার বাড়িতে চলে যায়। কেদারতলার বাসিন্দা মিন্নাল শেখ বলছেন, ‘‘ছোট থেকে শাবকে চিনি। পাড়ার সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করত। ও জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে শুনে ভয় করছে।’’ কেদারতলার আর এক বাসিন্দা শাহজাহান আলির কথায়, ‘‘গ্রামের এক জন দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশে থাকত। তারই মেজ ছেলে শাব। মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে গ্রামে বেড়াত আসত। কিন্তু ও জঙ্গিদের সঙ্গে যুক্ত জেনে এলাকায় মানুষ এখন আতঙ্কে আছেন।’’

দেশদ্রোহিতা, পাসপোর্ট জালিয়াতি সহ নাশকতামূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে হরিহরপাড়ার দুই ব্যক্তি আব্বাস আলি ও মিনারুল শেখকেও গ্রেফতার করেছে অসম এসটিএফ। গত বুধবার ভোরে হরিহরপাড়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকা থেকে আব্বাস আলি ও মাগুড়া এলাকা থেকে মিনারুল শেখকে গ্রেফতার করা হয়। রাজ্য পুলিশের দাবি, রাজ্য পুলিশের এসটিএফ তাদের সহযোগিতা করেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, ধৃতরা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা এবিটি-র সদস্য।

গোয়েন্দাদের দাবি, আব্বাস ও মিনারুলের সঙ্গে অসমের যোগ রয়েছে। পেশায় পাম্পসেট সারাইয়ের মিস্ত্রি মিনারুল অসম থেকে পেঁয়াজের বীজ নিয়ে এসে এলাকার চাষিদের কাছে বিক্রি করতেন। সূত্রের দাবি, সেই সুবাদেই অসমে যাতায়াত করতেন তিনি। মাঝেমধ্যে অসমের লোকেরাও তাঁর বাড়িতে আসতেন। স্থানীয়দের দাবি, যদিও আগে সে কথা তেমনভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতারের পর সেই সমস্ত কথা এলাকার বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরছে।

তবে লেখাপড়া না জানা মিনারুলের জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ মানতে পারছেন না পরিবারের লোকেরা ও স্থানীয়দের একাংশ। গোয়েন্দাদের দাবি, অসম থেকে ধৃত দুই জঙ্গির মুর্শিদাবাদ ও জলপাইগুড়ি যাতায়াত ছিল। তারা মুর্শিদাবাদের মিনারুল ও আব্বাসের সঙ্গে দেখা করতেই আসত কি না, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। মিনারুলের ছোট ছেলে আব্বাসের তৈরি বেসরকারি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। ফলে আব্বাসের কাছে মিনারুলের নিত্য যাতায়াত ছিল।

আব্বাসের গ্রেফতারের পরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ওই মাদ্রাসা। আব্বাসের পরিবারের লোকেদের দাবি, কাজের জন্য বিশেষ করে মাদ্রাসার আদায়ের জন্য বেলডাঙা, সুতি সহ বিভিন্ন জায়গায় যেতেন আব্বাস। তাদের দুজনের কাছ থেকেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে মোবাইল ফোন। বিভিন্ন ওয়টস্যাপ গ্রুপে তারা যুক্ত ছিলেন বলে সূত্রের দাবি। সূত্রের দাবি, কিছু ওয়টস্যাপ গ্রুপে অনেকে না জেনেই থেকে যান। একই ভাবে মিনারুল, আব্বাসও ওই ধরনের গ্রুপে থাকতে পারে বলে ধারণা তাদের পরিবারের লোকেদের। মাগুড়ার পাশের গ্রামেই প্রায় ১২ বছর ধরে থাকতেন এবিটি-র সক্রিয় সদস্য শাদ শেখ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement