ঘন কুয়াশা, ভাঙা রাস্তা, ঘুম চোখের চালক— শীতের সকালে বাস-ট্রাক-ট্রেকারের দুর্ঘটনার হাজারো কারণের পিছনে নিশ্চুপে যে আরও একটি কারণ রয়েছে, আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে ফাইল ঘাঁটলে হুড়মুড়িয়ে তা সামনে এসে পড়ে।
গাড়ির স্বাস্থ্য উদ্ধারের শংসাপত্র বছরে নিয়ম করে না করানোর ফলে লেট ফি’র পাহাড়ে প্রায় ন্যুব্জ পণ্য ও যাত্রিবাহী গাড়ির ফিটনেস বা স্বাস্থ্যোদ্ধারের প্রশ্নটি ধামাচাপা পড়ে থাকে বছরের পর বছর। সেই ভগ্ন স্বাস্থের গাড়ি পথে নামানোর ফলেই বিপত্তি ঘটে বেশিরভাগ সময়ে। অবস্থা সামাল দিতে তাই লেট ফি’র ধাক্কা কমিয়ে সরকারকে সেই ভর্তুকির পথেই হাঁটতে হচ্ছে। বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে (কমার্শিয়াল) বিলম্বিতি ফি’র হার কমিয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট পুনর্নবীকরণের সুবিধা দেওয়াই তাই স্থির করেছে পরিবহণ দফতর।গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্রের (ফিটনেস সার্টিফিকেট) মেয়াদ উত্তীর্ণের পর দৈনিক ৫০ টাকা হিসেবে বিলম্বিত ফি (লেট ফি) বরাদ্দ হয়। দু’তিন বছর ধরে স্বাস্থ্য উদ্ধারের পথে না হেঁটে, শংসাপত্র পুনর্নবীকরণের প্রশ্নটি এড়িয়ে থাকায় অনেক বাণিজ্যিক গাড়ি রয়েছে যার কোনওটার লেট ফি বাবদ প্রায় ৬০ হাজার টাকা বকেয়া রয়ে গিয়েছে। এমন নজির কম নয়। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র ছাড়াই রাস্তায় ছুটছে সেই গাড়ি। আর তার হাত ধরেই ক্রমাগত ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় রাশ টানতেই এ বার বানিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে বিলম্বিতি ফি কমিয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট পুনর্নবীকরণের সুবিধা দিচ্ছে রাজ্যের পরিবহণ দফতর। ৩০ দিন বা তার বেশি বিলম্বের ক্ষেত্রে মাত্র ১৫০০ টাকা বিলম্বিত ফি দিলেই সব খুন মাফ!
১৫ জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিবহণ দফতর এই বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুরে বহরমপুরে বাস মালিক ও লরি মালিকদের ডেকে পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে ব্যাপারটি জানানো হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে আবেদন— এ বার অন্তত লেট ফি দিয়ে গাড়িগুলির স্বাস্থ্য ফেরান।
মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় আইন অনুসারে ফিটনেস সার্টিফিকেট বিলম্বের কারণে দিন পিছু অতিরিক্ত ৫০ টাকা করে ফি ধার্য হয়। দু’তিন বছর ধরে ফিটনেস সার্টিফিকেট না করেই রাস্তায় কিছু গাড়ি নামছে। তাই দুর্ঘটনা কমাতে বিলম্বিত ফি’র মূল্য কমিয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
মঙ্গলবার পরিবহণ দফতরের উদ্যোগে আয়োজিত ওই শিবিরে উপস্থিত হয়েছিলেন বাস মালিক শান্তনু সাহা। তিনি বলছেন, ‘‘পরিবহণ দফতরের ভাল উদ্যোগ। গাড়ির মালিকদের এই সুবিধা গ্রহণ করা উচিত।’’ তবে, মুর্শিদাবাদ জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল কুমার সাহা বলছেন, ‘‘অধিকাংশ বাস মালিক সময় মতো ফিটনেস সার্টিফিকেট নেন। তবুও যাঁরা এখনও নেননি, তাঁদের পরিবহণ দফতরের এই প্রকল্পের কথা আমরা জানাব।’’ মু্র্শিদাবাদ ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুন্তল বাজপেয়ী বলছেন, ‘‘অভিনন্দন জানানোর মতো পদক্ষেপ নিয়েছে পরিবহণ দফতর।’’প্রশ্নটা তা হলে থেকেই যায়, কর ফাঁকি দিয়েও একের পর এক দুর্ঘটনা সত্ত্বেও সাত খুন মাফ হয়!