সত্যজিৎ বিশ্বাস।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনকে হলফনামা দিয়ে কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী সত্যজিৎ বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, তিনি ৩০ গ্রাম সোনার মালিক। এর তিন বছরের মাথায়, ২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজোর আগের রাতে হাঁসখালিতে বাড়ির কাছেই গুলিতে খুন হন তিনি। তখন তিনি বিধায়ক। কয়েক মাস পর তাঁর স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস যখন লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রের প্রার্থী হন তখন তিনি হলফনামায় জানান, তাঁর কাছে ৬০০ গ্রাম সোনা আছে। মঙ্গলবার সত্যজিৎ বিশ্বাস হত্যা মামলার শুনানিতে এই নিয়েই প্রশ্ন তুললেন আইনজীবীরা।
এ দিন বিধাননগর ময়ূখ ভবনে বিশেষ আদালতে নিহত বিধায়কের ভাই সুমিত বিশ্বাসকে দ্বিতীয় দিনের জন্য জেরা করেন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা। দুপুর ২টোর পর বিচারক মনোজজ্যোতি ভট্টাচার্যের এজলাসে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সুবীর দেবনাথ জানতে চান, সত্যজিৎ বিয়েতে অনেক যৌতুক নিয়েছিলেন কিনা। সুমিত বলেন, “না, দাদা গরিব পরিবারের মেয়ে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পরেও শ্বশুরবাড়ি থেকে স্থাবর-অস্থাবর কিছুই নেয়নি।”
আইনজীবী জানতে চান, সত্যজিৎ বিশ্বাস থাকাকালীন তাঁর স্ত্রী উপার্জন করতেন কিনা। সুমিত জানান, না, স্ত্রীর প্রয়োজনীয় খরচ সত্যজিৎ মেটাতেন। আইনজীবী জানান, ২০১৯ সালের ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া তথ্য বলছে: সত্যজিৎ বিশ্বাসের নামে ১৫০ গ্রাম, স্ত্রীর নামে ৩০০ গ্রাম এবং ছেলের নামে ১৫০ গ্রাম সোনা রয়েছে। সর্বমোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭৩ লক্ষ টাকা। সাক্ষী বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। আইনজীবী দাবি করেন, বিধায়ক থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে সত্যজিৎ বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। যে কারণে এলাকার প্রচুর লোক তাঁর শত্রু হয়েছিল। সুমিত এ কথা অস্বীকার করেন।
সাক্ষ্যগ্রহণের এক পর্বে সুমিতের কাছে জানতে চাওয়া হয়, খুনের পর তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন কিনা এবং সেখানে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন কিনা। সাক্ষী সম্মতি জানান। এর পর আদালতে তিনটি ভিডিয়ো ক্লিপ দেখান অভিয়ুক্তের আইনজীবী। যার একটিতে অভিষেক বলেছেন, “যখন ঘটনাটা ঘটানো হয়েছে দশ বার লাইন কাটা হয়েছে। তার কেটে। আপনারা জিজ্ঞাসা করুন তো এলাকায় যারা আছেন তাঁদের কত বার কারেন্ট যায়, কত বার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়… তাঁর যে সিকুউরিটি সে দিন সে ছুটিতে ছিল। সুতরাং এটা সম্পূর্ণ ভাবে ওয়েল গট আপ, পূর্ব পরিকল্পিত।” সাক্ষী সম্মতি জানান। এই বক্তব্যের লিখিত রূপ আদালত গ্রহণ করেছে। অভিষেকের অন্য একটি ভিডিয়োতে দেখা যায় যে তিনি বলছেন, “যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, যে ফেরার সে কাপড় মুড়ি দিয়ে গুলি করেছে।” সাক্ষীকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি সম্মতি জানান। আইনজীবী জানতে চান, খুনের ঘটনার আগে সুমিত ভাইপোকে রাখতে বাড়ি যান কিনা। সুমিত বলেন “হ্যাঁ।” আইনজীবী তাঁকে বলেন, “আপনি নিজে খুনের ঘটনা দেখেননি, কারণ আপনি সেই সময়ে ভাইপোকে রাখতে বাড়ি গিয়েছিলেন। যদি দেখতেন তা হলে ঘটনার পরেই পুলিশকে জানাতেন। অথচ আপনি প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশকে কিছু জানাননি। পরে পুলিশ এবং দলের নির্দেশ মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে এসেছেন।” সুমিত এ কথা অস্বীকার করেন।