১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ কমায়, ভিন রাজ্যের ভ্রুকুটি

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:৪৫
Share:

পরিযায়ী: ভিন্ দেশে পাড়ি দেওয়ার ধুম। ফাইল চিত্র

বছর কয়েক আগে রাজমিস্ত্রির কাজে বেঙ্গালুরু যেতেন হরিহরপাড়ার সাহাজাদপুর গ্রামের মেহেবুব হক। গত দু’বছর সে পথে পা বাড়াননি তিনি। একশো দিনের কাজে বছরে ৯২ দিনই কাজ পেয়েছিলেন গ্রামে।

Advertisement

এ বছর এক দিনও কাজ জোটেনি তাঁর। মেহেবুব বলছেন, ‘‘আগের দু’বছর বাড়ির কাছেই রুজির উপায় খুঁজে পেয়েছিলাম। ভিন রাজ্যে আর পাড়ি দিতে হয়নি। এ বার শুনছি একশো দিনের কাজে বরাদ্দ কমে গিয়েছে। কাজ না পেলে ফের ভেসে পড়তে হবে। কষ্ট হবে, কিন্তু সংসারটা তো টানতে হবে!’’

মেহেবুব একা নন। জেলার বহু মানুষকে গত কয়েক বছরে সুদূর বিদেশে ভেসে পড়তে হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাজেটে ফের সেই ঘর-ছাড়ার ভ্রুকুটি। দিল্লির ট্রেনের অপেক্ষায় প্ল্যাটফর্মে বসে লালগোলার আখতার আলি তাই বলছেন, ‘‘কাজ না পেলে দূরের ভিন দেশই ভরসা, এ ছাড়া আর উপায় কী!’’

Advertisement

জেলার শ্রমিকদের, বিশেষত কৃষি শ্রমিকদের বছরভর কাজ থাকে না। আমন-বোরো ধান আর পাট চাষের মরসুমটুকু বাদ দিলে কাজ কোথায়! মাঠের দিকে মন পড়ে থাকলেও বছরের একটা বড় সময় কাজহীন বসে থাকার চেয়ে দূরের রাজ্যে জোগাড়ের কাজ করেও দু’পয়সা হাতে আসে। একশো দিনের কাজ কমে যাওয়ার আশঙ্কা সেই পুরনো দিন মনে করিয়ে দিচ্ছে জেলার দিন মজুর মানুষজনকে।

বছর পনেরো আগে একশো দিনের কাজের প্রকল্প চালু হওয়ায় মুর্শিদাবাদের শ্রমিকদের অনেকেই কাজ পেতে শুরু করেছিলেন ঘরের পাশে। দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ, কেরল থেকে কর্ণাটক কখনও বা নিছক ছাগল চড়ানোর পেশা নিয়ে মরুদেশ সৌদি আরব। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একশো দিনের কাজ সেই ভিন-দেশে পরিযায়ী হয়ে যাওয়ার হিড়িকে রাশ টেনেছিল। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পের জেরে গ্রামের মানুষ কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু কাজ না থাকলে সেই চেনা অভ্যাসে ফের পরিযায়ী হয়ে যাবেন ওঁরা। আমাদের হাত-পা বাঁধা কাজ দেব কোথা থেকে!’’

গত বছর ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন ভিন-রাজ্যে কর্মরত ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করেছিল। সেই রিপোর্ট বলছে— জেলা থেকে ভিন রাজ্যে কর্মরত শ্রমিক-ভোটারের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ ১৪ হাজার। তবে সরকারি পরিসংখ্যান এ কথা বললেও বাস্তবে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা যে এর দ্বিগুণ তা মেনে নিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।

ভিন রাজ্য বা ভিন দেশে কর্মরত শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই সংস্থার সম্পাদক মতিউর রহমান বলছেন, ‘‘যাঁরা একশো দিনের কাজ পান তাঁরা গ্রামের বাইরে সামান্য বাড়তি আয়ের সম্ভাবনা থাকলেও পা বাড়ান না। কিন্তু একেবারেই কাজ না পেলে ভিন রাজ্যে না গেলে পেট ভরবে কী করে!’’

২০০৫ সালে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প শুরু করেছিল। প্রথম দিকে এই প্রকল্পে মূলত রাস্তা তৈরি কিংবা পুকুরের মাটি কাটার কাজ হত। যত দিন গড়িয়েছে কাজের পরিধি বেড়েছে। ধীরে ধীরে স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে। অন্য প্রকল্পের সঙ্গে যৌথভাবে শৌচাগার নির্মাণ, বাগান তৈরি, নদী ভাঙন রোধ, খেলার মাঠ সংস্কার, ছাগল-গরু, হাঁস মুরগি পালনের পরিকাঠামো নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও এর আওতাভূক্ত হয়েছে। কিন্তু দিল্লিতে পালাবদলের পরে প্রকল্পে বরাদ্দ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি। আর তার জেরেই শ্রমিকেদের কপালে ফের যেন পরিযায়ী দিনের ভ্রুকুটি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement