বিক্ষোভের আঁচ। বুধবার শান্তিপুরে। নিজস্ব চিত্র
নয়াদিল্লিতে কৃষি ভবন থেকে টেনে হিঁচড়ে, প্রায় চ্যাংদোলা করে বার করা হচ্ছে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে— এই দৃশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে সমাজমাধ্যমে। আর সেই দৃশ্য সামনে রেখেই লোকসভা ভোটের আগে ময়দানে নামছে তৃণমূল। বুধবারই ফ্লেক্সে সেই ছবি লাগিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তৃণমূলের ছাত্র-যুবরা। যদিও বিরোধীদের দাবি, মানুষে মনে এই ঘটনা তেমন কোনও অভিঘাত তৈরি করবে না।
একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেও যাঁরা টাকা পাননি, তাঁদের বস্তা-বস্তা চিঠি নিয়ে মঙ্গলবার দিল্লিতে হাজির হয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সঙ্গে ছিল কিছু ভুক্তভোগী পরিবার, তার মধ্যে নদিয়ার কয়েকটি পরিবারও ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির দেখা না পেয়ে ধর্নায় বসা তৃণমূল নেতা-মন্ত্রী ও সাংসদদের জোর করে ভ্যানে তোলে দিল্লি পুলিশ। তার মধ্যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন ছিলেন, ছিলেন মহুয়ারাও।
পরে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন টুইটার) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ করে মহুয়া লিখেছেন, “আপনি আমাদের টেনে-হিঁচড়ে বার করে দিতে পারেন কিন্তু তাতে সত্য চলে যাবে না— আপনি পশ্চিমবঙ্গের এমএনআরইজিএ-এর হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ ভাবে আটকে রেখেছেন।” তাঁদের লাঞ্ছনার ছবি সামনে রেখে মঙ্গলবার রাত থেকেই বিক্ষোভ দেখাতে নেমেছিল তৃণমূল। বুধবার প্রায় সর্বত্র প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে। জেলাসদর কৃষ্ণনগর-সহ তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি গোটা উত্তর নদিয়া তো বটেই, বিজেপি প্রভাবিত দক্ষিণেও একই ধরনের বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতেই তাহেরপুরে রাধানগর বাজার এলাকায় পথ অবরোধ করে তৃণমূল। বুধবার বিকেলে রানাঘাটে শহরে প্রতিবাদ মিছিল পুরসভার সামনে থেকে শুরু হয়ে জিআরপি মোড়ে শেষ হয়। বিকেলে কুপার্সেও মিছিল বেরোয়। শান্তিপুরের রাস্তায় কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। নবদ্বীপ শহরেও ধিক্কার মিছিল হয়। কল্যাণী, হরিণঘাটা ও গয়েশপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে তৃণমূল ও টিএমসিপি।
রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সদস্য কুণাল চৌধুরীর দাবি, “আমাদের সাংসদের উপরে হামলার যে ছবি সামনে এসেছে তাতে সামনের লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের মানুষ বিজেপিকে আবার ছুড়ে ফেলে দেবে।” বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদারের পাল্টা দাবি, “কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের তৃণমূলকে ছুড়ে ফেলা শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
দক্ষিণে তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার ছবিটা অবশ্য তৃণমূলের পক্ষে তেমন অনুকূল নয়। গত লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্র জয়ের পরে বিজেপি সেখানে শক্ত মাটি পেয়ে যায়। দক্ষিণ নদিয়ার অধিকাংশ বিধানসভা কেন্দ্রও তাদের দখলে। যদিও তার পর পুরভোট এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারা ততটা সুবিধা করতে পারেনি। এখন একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা আদায় করতে গিয়ে রাজ্যের নেতামন্ত্রীদের পুলিশি আক্রমণের মুখে পড়তে হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে দক্ষিণে হৃতজমি পুনরুদ্ধার করতে চইছে তৃণমূল।
তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “মানুষ বুঝতে পারছে যে তাদের হকের টাকা চাইতে গিয়েই আমাদের নেতৃত্ব আক্রান্ত হয়েছেন।” বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “ওরা তো দিল্লিতে নাটক করতে গিয়েছিল! মানুষ এখন আর এ সব নাটক দেখছে না।”