ঘটনাস্থলে ফরেনসিক দল। নিজস্ব চিত্র।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর ধৃত ‘প্রেমিকের’ একাধিক সম্পর্কের কথা জানতেন যুবকটির প্রাক্তন প্রেমিকা। বেশ কিছু দিন আগে সোনারপুরের ওই তরুণী যুবকটির এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু মারফত ‘কনফারেন্স কলে’ ছাত্রীটির সঙ্গে কথাও বলেছিলেন।
গত ১৫ অক্টোবর, ঘটনার দিন কৃষ্ণনগরের ওই ছাত্রীটি যখন মরিয়া হয়ে ‘প্রেমিকের’ সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন, ছেলেটির ফোন তখন বন্ধ করা ছিল। যুবকটির সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বারবার ফোন করে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ছাত্রীটি।
পুলিশ সূত্রের খবর, সে দিন বিকালে সোনারপুরের ওই তরুণীকে ফোন করেন যুবকের বন্ধু। যুবকটির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না শুনে ওই তরুণী ছাত্রীর নাম করে বলেন, "কেন, ওর কাছে নেই? ওর কাছে যায়নি?" যুবকের বন্ধু বলেন, "না। তাই তো সে আমাকে ফোন করে মাথা খারাপ করছে। তাই ভাবলাম তোমায় ফোন করি, তোমার সঙ্গে দেখা করতে গেছে না কি?" তরুণী বলেন, "ও আবার আমার কাছে কী করতে আসবে? আমার সঙ্গে কোনও কথাই হয়নি। কোনও কন্ট্যাক্ট নেই। কেন, কিছু হয়েছে না কি? ইচ্ছা করে সুইচ্ড অফ করে রেখে দিয়েছে। এমন কারও কাছে আছে ও, যে এখন ফোন এলে ধরা পড়ে যাবে।” যুবকের বন্ধু জানান, ছাত্রীটি টোটো ভাড়া করে কৃষ্ণনগরের সব জায়গায় যুবককে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। শুনে তরুণী বলেন, “খুঁজে বেড়াচ্ছে মানেটা কী? ঝগড়া-টগড়া করেছে না কি? পুজোর সব ক’টা দিনই তো ওর সঙ্গেই ছিল।... আমাকে বলুক বা না বলুক, আমি পুরোটাই জানি।”
পুলিশের হাতে থাকা কল রেকর্ডে সোনারপুরের তরুণীকে বলতে শোনা যায়, “ওর (যুবকের) মাকে ফোন করেছিলাম কিছু দিন আগে। দেখলাম আমার নম্বরটা ব্লক করে দিয়েছে। আমি তো রোজ ফোন করি না। ন’মাসে ছ’মাসে এক বার ফোন করি। তবে ওর বিষয়ে কোনও কথা হয় না। ও হয়তো দেখেছে যে ওর মা ওর সম্পর্কে সত্যি কথাগুলো বলে দিচ্ছে। তাই মায়ের ফোন থেকে আমাকে ব্লক করে দিয়েছে।” এর পর ছাত্রীর কথা তুলে নিজের আশঙ্কার কখা বলেন সোনারপুরের তরুণী— “এ বার না ও ফোন করে আমাকে গালাগালি করে! ও সব কিছুতেই আমাকে সন্দেহ করে।” যুবকের বন্ধুটিকে তরুণী এ-ও বলেন, “তোমাকে যে মাঝে এক দিন ফোন করেছিলাম ওকে কনফারেন্সে নেওয়ার জন্য, সত্যি কথা ওকে বলতেই ফোন করেছিলাম। আর কত জনকে গালাগালি দেবে? এই তো আজ কোথায় চলে গেল, তাকে কি ধরতে পারছে? শুধু শুধু সে দিন গালাগালি করল কিছু না বুঝে-শুনে!"
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, এই সব কথা যখন হচ্ছে, যুবকটি তখন এক নতুন বান্ধবীকে নিয়ে রানাঘাটে ঘুরতে গিয়েছিল। তার বন্ধুকে ওই ফোনেই সোনারপুরের তরুণী বলেন, "আমি বলছি, বলে দিয়ো না। আমার মনে হয় ও (যুবকটি) রানাঘাটে আছে। একটা নতুন বান্ধবী আছে না? হতে পারে ওর সঙ্গেই (রয়েছে)। আমাকে বলেছিল, ‘তুই যদি না আসিস, আমি এর-ওর সঙ্গে ঘুরে বেড়াব।’... কেউ ফোন করলে ধরা পড়ে যাবে, সেই কারণেই হয়তো ফোনটা সুইচ অফ করে রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ দিকে আসেনি। এলে আমি খবর
পেয়ে যেতাম।"