অবস্থান বিক্ষোভে শিক্ষকেরা। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র
বায়োমেট্রিক হাজিরা এবং আরও কিছু বিষয়ে আপত্তি তুলে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্লাস বয়কট অব্যাহত। তার ফলে পঠনপাঠনও ব্যাহত হচ্ছে। উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষ গত দু’দিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নিজের ঘরে আসছেন না।
গত দিন দশেক ধরে নদিয়ার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চলছে। তাতে শামিল হয়েছেন শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে কর্মবিরতি। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত তা চলবে। বুধবারও উপাচার্যের ঘরের সামনে অবস্থান করা হয়েছে।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ শিক্ষকে সমিতির প্রতিনিধিরা কলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে যান আন্দোলনের উদ্দেশ্য জানাতে। এর পর বেলা ১২টা নাগাদ শতাধিক শিক্ষক গিয়ে হাজির হন উপাচার্যের ঘরের সামনে। তিনি অবশ্য শিক্ষকদের মুখোমুখি হচ্ছেন না। ঘণ্টা তিনেক চলে অবস্থান।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি তারকদাস বসুর দাবি, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ও বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদেরও আইনগত কারণে পিছিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু শঙ্করকুমার ঘোষ ‘স্বৈরাচারী’, নানা বিষয়েই নিজের মত তিনি অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে অভ্যস্ত। তাই তাঁরা আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের সমর্থনে গোটা রাজ্যের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দাঁড়িয়েছেন।
তবে একটি উল্টো স্রোতও আছে বইকি। উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ, বাংলা বিভাগের এক শিক্ষক গত বাইশে শ্রাবণকে রবীন্দ্রপ্রয়াণের পাশাপাশি ‘বায়োমেট্রিক দিবস’ হিসেব উল্লেখ করেছিলেন। ওই শিবিরের শিক্ষকদের বক্তব্য, উপাচার্য নিয়মের পক্ষে। যে শিক্ষকেরা নিয়ম মানতে নারাজ, তাঁরা বিরোধিতা করছেন। ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি করে আন্দোলন করছেন।
যদিও শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর প্রামাণিকের দাবি, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেব, এটা আমরা লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতায় ছাত্রদেরও তো ক্ষতি হচ্ছে! কয়েক মাস আগেই দেখা গেল, দূরশিক্ষার প্রশ্নে প্রায় দিনই ভুল ছিল। ছ’মাসের মধ্যে যে কোর্স ওয়ার্ক শেষ হওয়ার কথা, দেড় বছরে তা শেষ হয়নি। ফলে আন্দোলনে তাঁদেরও সায় রয়েছে। এ দিন তো গবেষকদেরও একাংশ প্রশাসনিক ভবনে মিলিত হয়ে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করেছেন।’’
তারক-প্রবীরদের কটাক্ষ, ‘‘এই আমলে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্কের তালিকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬ ধাপ নেমে গিয়েছে। আমরা নয় কর্মবিরতি করছি। উপাচার্য তো নিজের ঘরে বসে প্রশাসনিক কাজ করতে পারেন। আমরা তো তাঁকে ঘেরাও করিনি। কই, তা তো তিনি করছেন না!’ উপাচার্যকে ফোন করা হলে তিনি যথারীতি তা ধরেননি। ফলে তাঁর প্রতিক্রিয়াও মেলেনি।