এত দিন ভয়ে মুখ বন্ধ করে ছিলেন। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রী ‘কাটমানি’ বিষয়ে কড়া অবস্থান নেওয়ার পরে কল্যাণীর অটোচালকদের একাংশ প্রকাশ্যে দোষীর পরিচয় ফাঁস করে দিয়ে টাকা ফেরত চেয়েছেন! চাপের মুখে ভরা বাজারে প্রকাশ্যে টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে ইউনিয়নের দাপুটে নেতাকে।
অটো রুটে কাটমানির কথা খোলা সত্য। কোনও রাজনৈতিক দলই কোনওসময় তা বন্ধের চেষ্টা করেনি। বরং অভিযোগ, পরোক্ষে ইন্ধন জুগিয়েছেন। কাটমানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আবহে এ বার মঞ্চে নেমেছেন কল্যাণীর অটো চালকেরা। শহরের অটো ইউনিয়নের সম্পাদক মলয় সরকারের বিরুদ্ধে তাঁরা অভিযোগ এনে জানিয়েছেন, নতুন অটো রুটে নামাতে গেলে নেতাকে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। সেই সঙ্গে মাসে-মাসে তাঁর হাতে দিতে হয় ৩০০ টাকা। রুটে অটো বাড়লে চাঁদা কমে হয় মাসে ২০০ টাকা। এ ছাড়া, অটো কেনা-বেচার সময় ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষের থেকেই ইউনিয়ন টাকা নেয়।
শুক্রবার সকালে সেই সব টাকা ফেরতের দাবিতে শতাধিক অটো চালক জমায়েত হন কল্যাণীর চাঁদামারি বাজার এলাকায়। তাঁরা মলয়বাবুর বাড়ি ঘেরাও-এর পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তত ক্ষণে কল্যাণী থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় ঢুকে পড়েছে। অটো চালকেরা তখন দাবি করেন, মলয়কে বাজারে হাজির হয়ে টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে সর্বসমক্ষে। খানিকক্ষণের মধ্যেই মলয় বাজারে আসেন। সেখানে প্রকাশ্যে তিনি কথা দেন, ৬ জুলাইয়ের মধ্যে সব টাকা ফেরত দেবেন। তার পরে ক্ষুব্ধ অটো চালকেরা এলাকা ছাড়েন।
বছর আটেক আগে মদনপুর থেকে কল্যাণী শিল্পাঞ্চল পর্যন্ত অটো রুট চালু হয়। ইউনিয়ন সূত্রের খবর, প্রথমে ৩৭টি অটো নিয়ে ওই রুট চালু হয়। এখন সেই রুটে ১৭০টি অটো চলে। লোকসভা ভোটের পর ইউনিয়নের দখল নেয় বিজেপি। তৈরি হয় ইউনিয়নের অস্থায়ী কমিটি। সেই কমিটির সম্পাদক নেপাল দাসের অভিযোগ, ‘‘মলয় ও তাঁর দলবল এই রুটের অটো থেকে প্রায় এক কোটি টাকা নিয়েছে। নতুন অটো রুটে ঢুকলেই ২৫০০০ থেকে শুরু ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। আর কোনও অটো মালিক অটো বিক্রি করলে তাঁর কাছ থেকে নেওয়া হত অন্তত ১৫ হাজার টাকা। যিনি অটো কিনতেন তাঁর কাছ থেকেও সম-পরিমাণ টাকা নেওয়া হত।’’
এ দিন কাটমানি বিক্ষোভে হাজির অটোচালক সরিয়ত ঘরামি, মহাবুল মণ্ডল, উত্তম ঘোষ, তারক হালদার, আসাদুল মণ্ডল, শিবু বিশ্বাস, সঞ্জিত ঘোষ, শিবু দাস, প্রসেনজিত সিকদার, সুশান্ত বৈরাগী, বাপ্পা মণ্ডল, সুখেন মণ্ডল, সুদীপ ভক্ত, সুদীপ বিশ্বাসেরা অভিযোগ করেন, মলয় ছিল ইউনিয়নের সর্বেসেবা। অটো নামাতে প্রচুর টাকা নিতেন। তার উপর মাসে-মাসে ইউনিয়নের তহবিলে যে বিপুল টাকা জমা পড়ত, তারও এক লাখ টাকার হিসেব মলয় এখন দিচ্ছেন না।
মলয় কল্যাণী ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তপন মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ। তাই মলয়ের তোলাবাজি মেনে নিতে হয়েছিল বলে অটো চালকদের দাবি। কিন্তু লোকসভা ভোটের পর গ্রামীণ কল্যাণীতে তৃণমূলের ধস নামার পরই এখন টাকা চেয়ে অটো চালকেরা মুখ খুলছেন। টাকার বখরা তপন মণ্ডলের কাছেও যেত বলে অভিযোগ উঠেছে। মলয় বলছে, ‘‘এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত। এখন শুধু আমাকে ধরা হচ্ছে। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’ আর বর্তমান কমিটির সম্পাদক নেপাল বলছেন, ‘‘আগে তো মলয়কে ধরি। কান টানলে মাথা আসে। পরে মাথাকে ধরব।’’ তাঁর দিকে আঙুল ওঠার বিষয়ে তপনবাবু আত্মপক্ষ সমর্থনে দাবি করেন, ‘‘আমি কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছি সে প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। মিথ্যা অভিযোগ। মলয়রা এ সব কাণ্ড করে বেড়াচ্ছে তা বিন্দুবিসর্গ আগে জানতে পারিনি।’’