Nadia

অনাদরের কচুরিপানাই বদলে দিচ্ছে জীবন! দিনে হাজার হাজার টাকা রোজগার করছেন নদিয়ার শ্রমিকেরা

গ্রামগঞ্জে পুকুর, খাল-বিলে মাছ চাষের জন্য পানা পরিষ্কার করতে এখনও গ্যাঁটের কড়ি খরচ করতে হয় মৎস্যচাষীদের। গত এক বছরে সেই ছবিটা কিছুটা বদলেছে।

Advertisement

প্রণয় ঘোষ

করিমপুর শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩ ২০:১৮
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

জলাশয়ে অনাদরে পড়ে থাকা কচুরিপানা থেকেও যে কর্মসংস্থান সম্ভব, সে কথা সম্প্রতিই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন, কচুরিপাতা দিয়ে ব্যাগ বা খাবারের খালা বানিয়ে তা বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর সেই পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন না-হলেও, বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ দেখাচ্ছে কচুরিপানা। যা বিক্রি করে দিনে হাজার হাজার টাকা রোজগার করছেন অনেকে!

Advertisement

গ্রামগঞ্জে পুকুর, খাল-বিলে মাছ চাষের জন্য পানা পরিষ্কার করতে এখনও গ্যাঁটের কড়ি খরচ করতে হয় মৎস্যচাষীদের। গত এক বছরে সেই ছবিটা কিছুটা বদলেছে। এখন নিজেদের পুকুর থেকে কচুরিপানা তুলতে দেওয়ার জন্য উল্টে কিছু টাকাপয়সাও পান ব্যবসায়ীরা। আর যাঁরা বিভিন্ন জলাশয় থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করছেন, তাঁরাও তা বিক্রি করে নিত্য দিনের রোজগারে খুশি। নদিয়ার তেহট্ট মহকুমার পাইকারি বাজার থেকে সব্জি কিনতে আসেন ভিন্‌রাজ্যের আড়তদারেরা। তাঁদেরই নাকি কাজে লাগে কচুরিপানা! ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে সড়কপথে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। তার মধ্যে সব্জি যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, তার জন্য সাধারণত ফ্রিজ়ার কন্টেনার ব্যবহার করা হয়। যার খরচ অনেক বেশি। কিন্তু এই ফ্রিজ়ারের কাজ কচুরিপানাই করতে পারে। কচুরিপাতার নীচে রাখলে ঠান্ডা থাকে সব্জি। এতে খরচ অনেকটাই কমে যায়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী প্রমথেশ সেনও বলছেন, ‘‘কচুরিপানা হল হাইড্রোফনিক। অর্থাৎ, এর কাণ্ড, পাতায় প্রচুর পরিমাণে জল শোষিত অবস্থায় থাকে। এই কারণেই কচুরিপানাকে সহজেই কোনও কিছু দীর্ঘ ক্ষণ ঠান্ডা রাখার কাজে ব্যবহার করা যায়।’’

কচুরিপানার কারবারিরা জানাচ্ছেন, এখন মাছ ব্যবসায়ীরা ১০০-২০০ টাকা দিলেই তাঁরা পুকুরের পানা পরিষ্কার করতে রাজি হয়ে যান। সারা দিনে এক জন মজুর ২৫-৩০ বস্তা পানা সংগ্রহ করতে পারেন। সব্জির আড়তে সেই পানা পৌঁছে দিলে তা ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। যাতায়াতের খরচ বাদ দিলেও সেই মজুরের দৈনিক আয় হাজার টাকার বেশিই হয়। অন্য দিকে, ভিন‌্‌রাজ্যের সব্জি ব্যবসায়ীরাও জানাচ্ছেন, সব্জি সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ়ার কন্টেনার ব্যবহার করলে অন্তত ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। তার জায়গায় কচুরিপানা ব্যবহার করলে তা তিন-পাঁচ হাজারের মধ্যেই মিটে যায়। চাহিদা বাড়ছে বলেই কচুরিপানার ব্যবসায় ঝোঁক বাড়ছে।

Advertisement

কচুরিপানা থেকে নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় আশার আলো দেখছে জেলা প্রশাসনও। নদিয়ার জেলা কৃষি বিপণন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের হাতে এই মুহূর্তে সঠিক তথ্য নেই। তবে বহু মানুষই এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এটা নিয়ে যদি একটু পরিকল্পনা করা যায়, তা হলে আরও অনেককেই এই কারবারে যুক্ত করা যাবে।’’ কচুরিপানার এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তেহট্টের রবীন মণ্ডল জানান, তিনি এক সময়ে দক্ষিণ ভারতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। ফিরে আসেন লকডাউনের সময়। সেই সময়েই কচুরিপানার ব্যবসা শুরু করি। রবীনের কথায়, ‘‘প্রথম বার এক বস্তা কচুরিপানা বেচে ৫০ টাকা পেয়েছিলাম। সেই শুরু। এখন প্রতি দিন হাজার টাকারও বেশি রোজগার করি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement