নষ্ট ধান দেখে বাধ মানল না চোখের জল। ধুবুলিয়ায়। নিজস্ব চিত্র
রবিবার ছিল এবারের রমজানের শেষ দিন। তিরিশ দিনের রোজা রাখা শেষ হল এ দিনই। জোহরের নমাজ শেষে ইমামসাহেব মোনাজাত করছিলেন— “আতরের খুসবুর মতো আল্লার দোয়া ছড়িয়ে পড়ুক। সকলের দুঃখ-দুর্দশা দূর হোক। ইদের খুশি সকলের উপরে বর্ষিত হোক।” এ কথা বলতে বলতে সকলের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন আতর আর সুর্মা।
মসজিদের বারান্দায় বিষণ্ণ মনে বসে তখন মহিশুরার বাসিন্দা রফিকুল শেখ, মনিরুল মণ্ডলেরা।
রফিকুল, মনিরুলের গ্রাম মহিশুরা বিঘের পর বিঘে ফসলের খেতের মাঝে যেন দ্বীপের মতো। হাজার বারোশো মানুষের বাস। বেশির ভাগই চাষি। বাকিরা তাঁতশ্রমিক। বুধবার রাতের আগে এ গ্রামের চারপাশে ছিল শুধুই সবুজ সমারোহ। নধর পাট, লকলকে তিল কিংবা মরসুমি আনাজের ভরন্ত খেত উপচে পড়ছিল ফসলে। এক রাতেই সবুজরঙা ছবিটা ঘোলাটে করে দিয়েছে আমপান। এখন মাঠ জুড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ধান, পাট, তিলের কালচে শরীর। দু’দিনের কড়া রোদে পচনের গন্ধ বেরচ্ছে। আতরে সেই কষ্টের গন্ধ ঢাকতে ইদের নমাজে দোয়া চাইবেন ওঁরা সবাই।
লম্বা সময় ধরে চলা লকডাউনে এমনিতেই এবারের ইদে তেমন খুশি ছিল না। কিন্তু আমপান যেন অবশিষ্ট খুশিটুকুও নিয়ে গিয়েছে। অন্যান্য বার যে ভাবে ইদ পালিত হয় এবার তা হবে না। স্থানীয় জামে মসজিদের ইমাম আবদুল রহিম মণ্ডল বলেন, “করোনাভাইরাসের এই আবহে সকলকে পারস্পরিক দূরত্বের কথা বারে বারে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে মসজিদে জমায়েত হবে না। আমরা দোয়া চাইব, যেন পৃথিবী আবার শান্ত হয়।”
কিন্ত মহিশুরা, মায়াপুর, সোনাডাঙার চাষিরা জানেন না, সত্যি কী ভাবে আমপানের ক্ষতির পূরণ হবে। ভাতের জোগাড় নেই। মাথায় উপর ছাদ নেই। মহাজনের টাকায় জমিতে বোনা ফসল কাদায় লুটোচ্ছে। এই অবস্থায় ইদের খুশি কল্পনাও করতে পারছেন না কেউ। মনিরুল মণ্ডল বলেন, “লকডাউনে খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটলেও মাঠের ফসল দেখে মনে আশা ছিল। ভেবেছিলাম সামলে দিতে পারব। কিন্ত বুধবার রাতে সব শেষ হয়ে গিয়েছে।”
শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “নমাজে আতর ব্যবহারের পিছনে উদ্দেশ্য হল, সুগন্ধী মানসিক ভাবে সতেজ রাখে।” আতর-গন্ধ ওঁর ইদ কতটা ভাল করতে পারে এবার, সেটাই সময়ের অপেক্ষা।