নিরাপত্তা এখনও তিমিরে, বাড়ছে ভুল বোঝাবুঝিও

ফলে শনিবার প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার পরে রোগীর বাড়ির লোকজন হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০০:৫৯
Share:

তখন বিক্ষোভ চলছে। শনিবার জঙ্গিপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়টি সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। শনিবার জঙ্গিপুর হাসপাতালের ঘটনায় সে কথায় প্রমাণ দেয়। যদিও এনআরএস কান্ডের পরে হাসপাতালের নিরপত্তা আঁটোসাটো করার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সাত দিন পেরিয়ে গেলেও হাসপাতালে কোনও পুলিশ পিকেট বসেনি। নিয়োগ করা হয়নি জনসংযোগ অফিসার। এমনকি সরানো হয়নি বেআইনি গ্যারাজও।

Advertisement

ফলে শনিবার প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার পরে রোগীর বাড়ির লোকজন হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করেন। যদিও জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘স্বাস্থ্য কর্মী ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সেই ক্যাম্প চালু হবে।’’

জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু এবং চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা নতুন ঘটনা নয়। তবে শনিবার রেক্সোনা খাতুন নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনার পরে পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করার ফলে নিগ্রহের হাত থেকে রেহাই পান চিকিৎসক। এখন প্রসূতি মৃত্যুর জেরে যাদের জবাবদিহি দেওয়ার করার কথা, তাঁরা কেউই ঘটনার সময় হাসপাতালে ছিলেন না কেন? প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

২৫ বছরের ওই প্রসূতি শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে ওই রাতেই তাঁর সিজার হয়েছে। পরে শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এখন অস্ত্রোপচারের ১২ ঘণ্টা পরে কী এমন ঘটল, যার জেরে রোগীর মৃত্যু হল? রেক্সোনার বাবা বরজাহান শেখেরও একই প্রশ্ন।

তাঁর অভিযোগ, এই ১২ ঘণ্টা ধরে মেয়ের কোনও চিকিৎসা হয়নি। তিনি অবশ্য তাঁর ওই অভিযোগের কোনও উত্তর পাননি। ফলে হাসপাতালে দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ছুটে এসেছেন পড়শিরা। তিন ঘণ্টা ধরে হাসপাতালকে ঘিরে রেখে তাঁরা বিক্ষোভ দেখানোর ফলে চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রসূতির রক্তচাপ ছিল ১৮০/ ১২০। প্রসূতি ‘হাই-রিস্ক’ বলে মা ও শিশুর ক্ষতি হতে পারে আশঙ্কায় চিকিৎসকের বহরমপুরে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন নিয়ে যায়নি। ফলে ওই চিকিৎসক এক প্রকার ঝুঁকি নিয়েই সিজার করেন। প্রসূতিকে চিকিৎসক দেখেন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ। পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে দেন ৭২ ঘণ্টা না গেলে প্রসূতি বিপন্মুক্ত বলা যাবে না। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ প্রসূতির অবস্থা খারাপ হয়ে পড়লে চিকিৎসককে কলবুক পাঠানো হয়। তিনি এসে দেখেন প্রসূতিকে এইচডিইউতে নিয়ে গিয়ে চেষ্টা করেন। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।

রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, ‘‘চিকিৎসার গাফিলতিতে ওই রোগীর মৃত্যু হয়নি, এটা রোগীর পরিবারকে বুঝিয়ে বলার মতো সেই সময়ে হাসপাতালে কেউ ছিলেন না।’’ কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি হাসানুজ্জামান বাপ্পা বলছেন, “চিকিৎসকেরা হাসপাতালে ঠিক মতো পরিষেবা দিলে রোগীর বাড়ির লোকজনের ক্ষোভ থাকে না। কিন্তু অনেক সময়ে তার ঘাটতিতেই রোগীর বাড়ির লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement