কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জনে মানা হয় নানা ঐতিহ্য। — নিজস্ব চিত্র
বিসর্জন মানে নতুনের আহ্বান। বিসর্জন মানে মেনে চলা ঐতিহ্য। এ সব এখন মিলেমিশে গিয়েছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কৃষ্ণনগরের সঙ্গে। তাই জগদ্ধাত্রী পুজোর দশমী এগিয়ে এলেই চলে সময় সফরের তোড়জোড়।
দু’বছর ধরে মেনে চলা অতিমারিতে বিধিনিষেধের বাঁধন টপকে এ বার জগদ্ধাত্রীর বিসর্জনে আবার চেনা ছন্দে পাওয়া গেল কৃষ্ণনগরকে। ফিরে এল ঐতিহ্যের ‘সাঙ’ (বাঁশের তৈরি মাচা যাতে প্রতিমা চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নদীর ঘাটে বিসর্জনের জন্য)। ফিরল গ্যাসের বাতিও।
কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রধান ঐতিহ্য ঘট ভাসান এবং প্রতিমা নিরঞ্জন। দশমীর সকালে ঘট ভাসানের পর থেকেই শুরু হয়ে যায় বিসর্জনের প্রস্তুতি। প্রথা, এ শহর ছাড়ার সময় সব প্রতিমাকেই কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির নহবতখানা ছুঁয়ে যেতে হবে জলঙ্গী নদীর কদমতলা ঘাটে। সেখানেই এত কাল ধরে হয়ে আসছে নিরঞ্জন পর্ব। সব প্রতিমাকেই সাঙয়ে চাপিয়ে নদীর পাড় পর্যন্ত নিয়ে যান বেহারারা। কয়েকটি বারোয়ারি ২০০ বছরের ঐতিহ্য মেনে নিরঞ্জন শোভাযাত্রায় অংশ নেয় গ্যাস বাতি জ্বালিয়ে। ঢাকে ওঠে বিসর্জনের বোল। সবশেষে বিসর্জন হয় ‘বুড়িমা’র।
একে একে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জলঙ্গী নদীর ঘাটে। — নিজস্ব চিত্র।
দু’বছর পর বৃহস্পতিবার জগদ্ধাত্রীর বিসর্জনের শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পেরেছেন প্রবাসী অ্যানি ভট্টাচার্য। আপ্লুত স্বরে তিনি বলেন, ‘‘করোনার কারণে দু’বছর কৃষ্ণনগরে আসতে পারিনি। এ বার আমি এসেছি। আমার কাছে গল্প শুনে কানাডা থেকে তিন বন্ধুও এসেছে। সকলে মিলিয়ে পুজোর এবং বিসর্জনের আনন্দ উপভোগ করছি।’’
প্রতিমা নিরঞ্জনে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ। রাজবাড়ি থেকে কদমতলা ঘাট পর্যন্ত রাস্তা মুড়ে ফেলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায়। মহিলা কনস্টেবলের পাশাপাশি মোতায়েন উইনার্স বাহিনী। আছে সাদা পোশাকের পুলিশও। প্রতিমা নিরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণনগর পুরসভার উদ্যোগে প্রতিমার কাঠামো জল থেকে তুলে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীবক্ষে স্পিডবোট-সহ উপস্থিত বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। রয়েছে দমকলের ইঞ্জিনও। সব রকম পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল।