—প্রতীকী চিত্র।
নওদার সর্বাঙ্গপুরে গুলি চালানোর ঘটনার পরপর নওদা বিডিও অফিসে সরকারি কর্মীকে মারধর, হেনস্থার অভিযোগে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের বেশ কয়েক জন জনপ্রতিনিধি ও কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। দলের অন্দরের খবর, ওই দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নওদায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল ফের প্রকাশ্যে এসেছে।
সূত্রের খবর, অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূল কর্মীরা ব্লক তৃণমূল সভাপতি সফিউজ্জামান শেখের ঘনিষ্ঠ। তাদের গ্রেফতারের পর শোরগোল পড়েছে দলের অন্দরেই। ওই দুই ঘটনা ও গুলি-কাণ্ডে গ্রেফতারের পর ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন নওদার তৃণমূল বিধায়ক সাহিনা মমতাজ খানও। সাহিনা বলেন, “ব্লক সভাপতির নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় অসামাজিক কাজ চলছে। যখন তখন গুলি চলছে। সরকারি কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যাবে না। সবটাই দলকে জানিয়েছি।”
এ দিন বিকেলে নওদায় বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করেন নওদা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সফিউজ্জামান। পরে তিনি বলেন, ‘‘সোমবার থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ সভাপতি, কোনও পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধানরা কাজে যোগ দেবেন না। কাল থেকেই বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা গণইস্তফা দেবেন। যত দিন না বিধায়কের বিরুদ্ধে দল পদক্ষেপ করবে, আমরা থামছি না।’’
এই চাপানউতোরের প্রসঙ্গে বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ ইউনিটের তৃণমূলের চেয়ারম্যান রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, “নওদায় কিছু সমস্যা আছে। আশা করছি দল ঠিক পদক্ষেপ করবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে গত ৪ জানুয়ারি নওদার সর্বাঙ্গপুরে গুলিতে জখম হন রিন্টু বিশ্বাস নামে এক যুবক। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে গত শুক্রবার রাতে নওদা থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে নওদা পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ তমাল শেখ, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মহম্মদ আল্লারাখা ওরফে ধীরাজ সহ মোট পাঁচ জনকে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নওদা বিডিও অফিসে পঞ্চায়েত সমিতির ক্যাশিয়ার তন্ময় দাসকে হেনস্থা ও মারধরের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তমাল সহ এক দল জনপ্রতিনিধির। শনিবার ধৃতদের বহরমপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
দলের অন্দরের খবর, বিধায়ক ও ব্লক সভাপতির মধ্যে দ্বন্দ্ব বরাবরের। প্রথম থেকেই সফিউজ্জামানকে ব্লক সভাপতি হিসেবে মানতে নারাজ বিধায়ক ও তাঁর অনুগামীরা।
গত কয়েক বছর ধরে নওদায় একাধিক বার পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে দেখা গিয়েছে দুই শিবিরকে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের টিকিট পাওয়াকে কেন্দ্র করেও দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে বলে দাবি রাজনীতির কারবারিদের।
সফিউজ্জামান বলেন, “বিধায়ক প্রথম থেকেই আমাকে মানতে নারাজ। একাধিক তিনি তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচন, লোকসভা নির্বাচনে দলের হয়ে তাঁকে ভোটের ময়দানে দেখা যায়নি। দল সবটাই জানে। দলের কর্মীরা এটা মেনে নেবে না।”
নওদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহিদুল ইসলামও বলেন, “দলের কোনও কাজে আমরা বিধায়ককে পাই না। অথচ বিধায়ক দলের বিরুদ্ধে যাবতীয় কাজকর্ম করছেন। এরকম চলতে থাকলে আমরা বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা গণইস্তফা দেব।”
বিধায়ক সাহিনা বলেন, “দল বিরোধী কাজ বা কোনও অসামাজিক কাজকে সমর্থন করব না। দলের নেতারা সবই জানেন।”