—প্রতীকী চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে যেখানে, সেই শান্তিপুরে মণ্ডল সভাপতি বদল নিয়ে দলের অসন্তোষ জমা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতির কাছে মণ্ডল সভাপতি বদল নিয়ে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন দলের নিচুতলার একাধিক নেতা, কর্মী এবং জনপ্রতিনিধি।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার একাধিক জায়গায় মণ্ডল সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে পুরনোদের সরিয়ে আনা হয়েছে নতুন মুখ। লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই ওই রদবদল বলে সূত্রের খবর। আবার নিচুতলায় এই রদবদলকে ঘিরে বিজেপির অন্দরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। শান্তিপুর থানা এলাকায় বিজেপির তিন জন মণ্ডল সভাপতিকে বদল করা হয়েছে। শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি চঞ্চল চক্রবর্তীর বদলে আনা হয়েছে বিজন সরকারকে। আবার গয়েশপুর ও বাগআঁচড়ায় সাফল্যের পরেও কমল বিশ্বাসকে সরিয়ে আনা হয়েছে উত্তম বিশ্বাসকে। শান্তিপুর শহরেও একটি মণ্ডলে জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়ের বদলে আনা হয়েছে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি বলরাম ঘোষকে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রদবদলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বিজেপি নিচুতলায়। বিজেপির নিচুতলা থেকে স্থানীয় নেতাকর্মী এবং পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিরাও জেলা নেতৃত্বের কাছে লিখিত ভাবে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি এই সব পদে যাঁরা আগে ছিলেন তাঁদের ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। জেলায় একমাত্র শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতি গত পঞ্চায়েত ভোটে দখল করেছে বিজেপি। শান্তিপুর ব্লকের মধ্যে তিনটি পঞ্চায়েত পেয়েছে তারা। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু এবং আগের বোর্ডের কর্মাধ্যক্ষ পম্পা মুখোপাধ্যায়ের ফুলিয়া টাউনশিপ পঞ্চায়েত জিতে এ বার তৃণমূলকে বড় ধাক্কা দিয়েছে বিজেপি। সেখানকার মণ্ডল সভাপতিকে এ বার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি করা হয়েছে। সেই মণ্ডলের সভাপতি চঞ্চল চক্রবর্তীকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দলীয় পদ থেকে। আবার বাগআঁচড়া, গয়েশপুর পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করলেও সেখানকার মণ্ডল সভাপতি কমল বিশ্বাসকে সরানো হয়েছে।
বিজেপির নেতাকর্মীদের একাংশের দাবি, রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের বিরোধী গোষ্ঠী হওয়ায় তাঁদের উপর কোপ পড়েছে। সামগ্রিক ভাবে এই রদবদলে জগন্নাথের হাত দেখতে পাচ্ছেন কেউ কেউ। বাগআঁচড়া পঞ্চায়েতের প্রধান রোহিত জান বলেন, ‘‘যে ভাবে মণ্ডল সভাপতি বদল হয়েছে তা আমরা মানছি না। আগের সভাপতি কমল বিশ্বাসকেই পদে ফেরাতে হবে। তিনি সফল ছিলেন।’’ আবার সদ্য পদ হারানো শান্তিপুর শহর মণ্ডল (৪) এর প্রাক্তন সভাপতি জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এই রদবদলে দলের সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হল। কোনও এক জন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কথা শুনে দল চালালে আগামী দিনে ভুগতে হবে। যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্য ব্যক্তিদের পদে আনা হচ্ছে।’’ আবার গয়েশপুর পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল ঘোষ বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত আমরা কেউ মেনে নিইনি। আমাদের আগের মণ্ডল সভাপতি যথেষ্ট সফল ছিলেন। জেলা সভাপতিকে তা লিখিত ভাবে জানিয়েছি।’’ শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতি সহ-সভাপতি চঞ্চল চক্রবর্তীকেও দলের মণ্ডল সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি পদে অবশ্য তিনি রয়েছেন। তাঁর হাত ধরে এই এলাকায় দলের সংগঠন গতি পেয়েছিল বলে দাবি। পঞ্চায়েত ভোটে সাফল্য এসছে। তাঁকে সরানো নিয়েও অবশ্য জেলার নেতৃত্বের কাছে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। চঞ্চল নিয়ে অবশ্য বলেন, ‘‘দল যখন যা দায়িত্ব দিয়েছে, তা-ই পালন করেছি। ভবিষ্যতে তা-ই করব।’’ রানাঘাটের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকার বলেন, "দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কিছু নিয়ম নীতি মেনে সাংগঠনিক রদবদল হয়। এর জন্য দলের নির্দিষ্ট কোর কমিটি আছে। এতে আমার কোনও ভূমিকা নেই। যাঁরা আমার কথা বলছেন, ঠিক বলছেন না।" বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেউ কেউ অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলব।’’