সভায় সুকান্ত। নিজস্ব চিত্র
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কর্মসূচিতেও বিভাজন অব্যাহত রইল। সোমবার বহরমপুরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে বিজেপির রাজ্য সভাপতির উপস্থিতিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সেখানে দলের বিক্ষুব্ধরা অনুপস্থিত থাকলেন। মুর্শিদাবাদের বিজেপির বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ-সহ দলের পদত্যাগী নেতারা এবং তাঁদের সমর্থকরা এ দিনের দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকলেন। তবে বিক্ষুব্ধদের সমর্থন জানালেও সোমবারের দলীয় কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে দলের বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্রকে।
এ দিন মুর্শিদাবাদ শহরে দলের মণ্ডল কমিটির কার্যালয় উদ্বোধন ঘিরেও কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। অভিযোগ, সেখানে দলের রাজ্য সভাপতি ওই অফিসের উদ্বোধন করেছেন। অথচ সেখানকার ৬ জন বিজেপি কাউন্সিলরাকে ডাকা হয়নি।
জেলায় জেলায় দলের অন্দরে বিক্ষোভ মাথা চাড়া দেওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের দলে কোনও বিক্ষোভ নেই। কিছু কিছু মানুষ মনে করছেন, তাঁরা যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। কিন্তু রাজনীতিতে বিজেপির মতো দলে এটা করা যায় না। এটা তৃণমূলের সংস্কৃতি। আমাদের দলে সাময়িক সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মতো বড় মন থাকতে হয়। কেউ কেউ মেনে নিতে পারেন না, তাঁদের অসুবিধা হয়।’’ সুকান্ত বলেন, ‘‘যাঁরা মনে করেছেন দলের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, দল তাঁদের ইস্তফার ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা করছে। তবে দলের শৃঙ্খলা সব থেকে বড়। তার উপরে কেউ নেই, কোনও বিধায়ক না, সাংসদ না, রাজ্য সভাপতিও না। শৃঙ্খলাকে সম্মান করি। সবাইকে মানতে হবে।’’
যা শুনে রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘আমি বিজেপির সংস্কৃতি ভালই জানি। কারণ তাঁর (রাজ্য সভাপতির) আগে থেকে বিজেপি করছি। উনি যাকে জেলা সভাপতি করেছেন, তিনি কী ভাষায় কথা বলেন, তাঁর সংস্কৃতি কী, তাঁর কথা বলার ধরন বাংলার মানুষ জেনে গিয়েছেন।’’ এ দিনের কর্মসূচির অনুপস্থিতির বিষয়ে গৌরীশঙ্কর বলেন, ‘‘জেলা সভাপতি শেষ মূহূর্তে রবিবার রাতে ফোন করে কর্মসূচি থাকার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমি বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে কলকাতায় এসেছি।’’ সুকান্ত মজুমদারও বলেন, ‘‘গৌরীশঙ্করবাবু বিধানসভার বৈঠকে থাকায় এদিনের সভায় আসতে পারেননি বলে জেলা সভাপতিকে জানিয়েছেন।’’
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি যাত্রাকে কটাক্ষ করেছেন সুকান্ত। সুকান্ত বলেন, ‘‘সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক। সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা যাচ্ছেন। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অনেক দিন পরে যাচ্ছেন। কারণ তিনি এই ফেডারাল স্ট্যাকচারকে মানতেন না। আমার মনে হচ্ছে যেহেতু ভাঁড়ারে টান পড়েছে পয়সা নেই তাই এখন দিল্লিতে ভিক্ষা করতে যাচ্ছেন।’’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করা নিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি বলেছেন আমি রাজ্যের নেতা, তাই রাজ্যের গ্রুপে থাকব, জেলার গ্রুপে থাকব না।’’ দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর মত পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমার সঙ্গে দিলীপদার কোনও মত পার্থক্য নেই। এটা সাংবাদিকদের সমস্যা। আপনারা গতকাল দেখেছেন দিলীপদার আর আমি একসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করেছি, মিছিল করেছি। মতপার্থক্য তা একসঙ্গে করতাম না।’’ এদিন দিলীপ ঘোষ বলেছেন সুকান্তের অভিজ্ঞতা কম, আমারও কম ছিল। রাজনীতি করতে করতে অভিজ্ঞতা বাড়ে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সুকান্ত বলেন, ‘‘দিলীপদা ঠিকই বলেছেন, এটাই স্বাভাবিক।’’