Missing and found

পান দোকানির চেষ্টায় ন’বছর পর ঘরে বৃদ্ধা

কোচবিহারের ঘোকষাডাঙার রুইডাঙা গ্রামের গীতার বিয়ে হয়েছিল ময়নাগুড়ির শান্তি সরকারের সঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৫
Share:

বাড়ি ফেরার আনন্দে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছেন গীতা। সোমবার, কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

নয় নয়টা বছর কেটে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সঙ্গে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। দেখা হতেই ভাইয়ের হাত দুটো জড়িয়ে ধরে মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন বৃদ্ধা। চোখ ভরে গেল জলে। যে অশ্রু প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার আনন্দের।

Advertisement

এতদিন ধরে কৃষ্ণনগর স্টেশনে পড়ে থাকতেন। ভিক্ষা করতেন। সকলেই জানত মানুষটা মানসিক ভারসাম্যহীন। থাকতে থাকতে অনেকেই তাঁর ‘কাছের’ হয়ে গিয়েছিল। তাঁদেরই একজন স্টেশনের পান-সিগারেটের দোকানি সুশীল সাহা। তাঁর কাছেই প্রথম বাড়ির ঠিকানাটা কোনওরকমে বলতে পেরেছিলেন বছর পঁয়ষট্টির গীতা সরকার। তাঁকে বাড়িতে ফেরানোর উদ্যোগ তখন থেকেই শুরু হয়। পরে নানা মাধ্যমে কোচবিহার জেলার ঘোকসাডাঙা থানার রুইডাঙা গ্রামে বৃদ্ধার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় সম্ভব হয়। দিন তিনেক আগে যোগাযোগ হয় তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে। সোমবার স্ত্রীকে নিয়ে ভাই সুভাষ সরকার চলে আসেন দিদিকে নিতে। শুধু গীতা নন, দিদিকে ফিরে পেয়ে আনন্দ ধরে রাখতে পারলেন না ভাইও। এক গাল হেসে সুশীল সাহার হাত দুটো ধরে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, “অপনার জন্য দিদিকে ফিরে পেলাম। সারাজীবন আপনার কথা মনে রাখব।”

কোচবিহারের ঘোকষাডাঙার রুইডাঙা গ্রামের গীতার বিয়ে হয়েছিল ময়নাগুড়ির শান্তি সরকারের সঙ্গে। বিয়ের কয়েক বছর পর দুই সন্তান-সহ তাঁকে বাপের বাড়িতে রেখে যান স্বামী। আর নিয়ে যাননি। সেই থেকে বাপের বাড়িতেই ছিলেন। পরিবারের দাবি, একটা সময় পর গীতার মানসিক সমস্যা দেখা যায়। মা মারা যাওয়ার পর সেই সমস্যা আরও বাড়ে। ভাই সুভাষ সরকার বলেন, “একদিন দিদি হঠাৎই বাড়ি থেকে উধাও হয়। অনেক খুঁজে না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আবার যে ফিরে পাব ভাবিনি।”

Advertisement

ঘরেল ফেরানোর কাজটা অবশ্য সহজ ছিল না। পুজোর সময় প্রথম কথা বলতে বলতে আচমকাই সুশীল সাহাকে নিজের বাড়ির ঠিকানা বলে দেন গীতা। কিন্তু শুধু গ্রামের নামে তো আর খুঁজে বের করা সহজ নয়। সুশীল সাহা এসইউসিআইয়ের যুব সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত। কথাটা তিনি দলের স্থানীয় নেতাদের জানান। তাঁরাই কোচবিহারে নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের মাধ্যমে তিন দিন আগে গীতার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। বিষয়টি জানার পর সোমবার ভাই সুভাষ স্ত্রীকে নিয়ে চলে আসেন কৃষ্ণনগরে। এতদিন পর ভাইকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন গীতা। বলেন, “আমি বাড়ি যাব। তোরা কি আমাকে নিতে এসেছিস? আমি কিন্তু বাড়ি যাব।”

সোমবার কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে ভাইয়ের হাত ধরে ট্রেনে ওঠেন গীতা। সঙ্গে নিয়ে গেলেন ভিক্ষা করে পাওয়া প্রায় ২০ কোজি খুচরো পয়সা। ট্রেনে উঠতে উঠতে বার বার পিছনে ফিরছিলেন। যাত্রীদের ভিড়ে এত বছরের চেনা মুখগুলোকে হয়তো খোঁজার চেষ্টা করছিলেন। সুশীল বলেন, “মানুষটা স্টেশনেই থাকত। বছরের পর বছর দেখতে দেখতে কেমন জানি মায়া পড়ে গিয়েছিল। পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে ভালই লাগছে। তবে আর কোনওদিন দেখতে পাব না ভেবে কষ্টও হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement