প্রতীকী ছবি।
শুধু সরকারি কর্মীদের উপরে ভরসা করলে চলবে না। ডেঙ্গি মোকাবিলায় শামিল করতে হবে সাধারণ মানুষকে। তা-ই গত বছর যে সব এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা গিয়েছিল সেই সব এলাকায় একেবারে গ্রাম সংসদ স্তরে তৈরি করা হচ্ছে কমিটি। কমিটির সদস্যেরা দেখবেন, কোথাও জল জমে আছে কি না, কোথাও মশার লার্ভা জন্মেছে কি না, গ্রামের কারও জ্বর হয়েছে কি না তা খেয়াল রাখবে। আর সেই সব তথ্য তাঁরা ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সেন’ কর্মীদের খবর দেবেন। সেই মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এ বার প্রথম থেকেই ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকাগুলিতে বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, নজরদারি চালানোর পাশাপাশি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণ মানুষকে জড়িয়ে নেওয়া হবে। আর সেটা করতে গিয়েই এই ব্লকগুলিতে একেবারে গ্রাম সংসদ থেকে ৫-৬ জন শিক্ষিত-সচেতন মানুষদের নিয়ে তৈরি হচ্ছে সেই কমিটি। কমিটিতে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসক, পুরোহিত ও ইমামদের পাশাপাশি থাকছে পড়ুয়ারাও। তারই খবর দেবেন ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সেন’ দের। আর সেই তথ্যের ভিত্তিতে সেই রিসোর্স পার্সনেরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন। শুধু তাই নয়, খবর যাতে দ্রুত সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে আসতে পারে তার জন্য তৈরি করা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। গ্রামের ‘সাব সেন্টার’-এর এএনএমরা সেই গ্রুপের অ্যাডমিন হচ্ছেন। গ্রুরে থাকছেন এলাকার সমস্ত আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। এলাকায় তেমন কোনও খবর পেলেই এই কর্মীরা তা সঙ্গে সঙ্গে সেই গ্রুপে পোস্ট করে জানাবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গত বছর হাজার চেষ্টা করেও থামানো যায়নি ডেঙ্গি। হুহু করে বেড়ে গিয়েছিল ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। এ বার অনেক আগে থেকেই সেই সব জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করে বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও। যাতে ওই সব এলাকায় আবার নতুন করে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিতে না পারে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই সম্ভাবনা প্রবল। কারণ গত বছর যে সব এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা গিয়েছিল সেই সব এলাকাতে এ বারও ডেঙ্গি ছড়াতে পারে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলছেন, “আসলে ওই এলাকায় গতবার মশারা ডিম পেড়ে রেখেছিল। অনুকূল পরিবেশ পেলে সেই ডিম থেকে এ বার লার্ভার জন্ম হবে। সেটা কোন ভাবেই করতে দেওয়া যাবে না।” সে কারণে জুলাই ও অগস্ট মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বৃষ্টির জল পেলে এই সময় লার্ভা জন্মাবে জানান ওই স্বাস্থ্যকর্তা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত বছর নদিয়ায় সরকারি ভাবে ডেঙ্গিতে কোনও মৃত্যুর খবর না থাকলেও ১১৫১ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার মধ্যে হরিণঘাটা, চাকদহ, হাঁসখালির পাশাপাশি কৃষ্ণনগর-১ ব্লকে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছিল সবচেয়ে বেশি। হরিণঘাটা ব্লকে ১৪২ জন ও পুরসভায় ২২ জন, চাকদহ ব্লকে ১৩২ জন ও পুরসভায় ছিল ৫২ জন, হাঁসখালি ব্লকে ৮২ জন এবং কৃষ্ণনগর-১ ব্লকে ১২২ জন আক্রান্ত হন।