প্রতীকী ছবি।
‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’ যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে ‘ভীতি’র কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, বিধানসভা নির্বাচনের মুখে সংখ্যালঘু প্রভাবিত মুর্শিদাবাদ জেলায় ইমাম মুয়াজ্জিনদের একটি সংগঠনের প্রচারে তা এক রকম স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। ভোটের মুখে ‘অল বেঙ্গল জেলা ইমাম অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রচারে তাই ধর্মের নামে রাজনীতির প্রচারকদের দূরে রাখার পাশাপাশি সমান তালে গুণ কীর্তন করা হয়েছে রাজ্য সরকারের। বিরোধীরা মনে করছেন, যা বকলমে তৃণমূলের ভোট প্রচারই হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রতীকে ভোট দেওয়ার আবেদন হয়ত নেই, কিন্তু গত দশ বছরে তৃণমূল শাসিত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি এবং তার সাফল্যের কথা বলে কার্যত তা রাজ্যের শাসক দলের ভোট প্রচারেরই নামান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি।
অল বেঙ্গল জেলা ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক নিজামুদ্দিন বিশ্বাস অবশ্য মানতে চাননি সে কথা। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার করিনি। তবে যে কোনও সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিরই বিরোধী আমরা। তা বলে গিয়েই হয়ত রাজ্য সরকারের দু-একটি সফল জনহিতকর কর্মসূচির উল্লেখ করেছি মাত্র।’’ এ ব্যাপারে দিন কয়েক আগে বহরমপুরে ওই সংগঠনের বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ইমামদের ওই সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে তা যে তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিকে বড় বেশি প্রচারের আলোয় এনে ফেলেছে তা মেনে নিয়েছেন ওই সংগঠনের কর্তা-ব্যাক্তিদের অনেকেই।
বিজেপির জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ সরাসরি বলেন, ‘‘যে ইমামরা তৃণমূলের হয়ে প্রচার করছেন তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর বেতনভুক্ত কর্মচারী। প্রকৃত নিরপেক্ষ ইমামরা তাঁদের প্রচার করবেন না।’’
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (মিম)জেলার আহ্বায়ক আসাদুল শেখ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ইসারায় কিছু ইমাম এমন প্রচার করছেন। তাতে কিছু লাভ হবে না। বাংলার মানুষ সব বুঝে গিয়েছেন।’’
তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান বলেন, ‘‘আমরা কাউকে প্রচার করার দায়িত্ব দিইনি। সরকারের ভাল কাজ দেখে, সরকারের কাজে সুফল পেয়ে কেউ প্রচার করতে পারেন। ওঁরা বুঝতে পেরেছেন বিজেপি এলে কত ক্ষতি হতে পারে। তাই হয়তো নিজে থেকে প্রচার করছেন।’’
নিজামুদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা সরাসরি কোনও দলকে ভোট দেওয়ার কথা তো বলছি না। তবে রাজ্য সরকার অনেক কাজ করেছে যা সাধারণ মানুষকে আস্থা জুগিয়েছে। আমরা সেগুলি তুলে ধরছি, এবং তা অত্যন্ত সচেতন ভাবেই করছি। কারণ তাতে রাজনীতির বিভাজনে ধর্মের অনুপ্রবেশকে রোখাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তবে, সরকার এখনও বেশ কিছু কাজ করেনি। সেগুলি যাতে দ্রুত করে সে কথাও আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
আর তা নিয়েই আপত্তি জানিয়েছে ইমামদের অন্য একটি সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া ইমাম মুয়াজ্জিন অ্যান্ড সোশ্যাল অর্গানাইজেশন’। সেই সংগঠনের মুর্শিদাবাদের জেলা সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘মানুষ নিজের ভোট যাকে খুশি দেবে। তাতে আমরা বলার কে, আমরা নির্দিষ্ট কোনও দলকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রচার করার পক্ষপাতি নই। তবে এমন কাউকে ভোট দেওয়া ঠিক নয় যারা সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত শক্ত করবে।’’
ইমামদের ওই দু’টি সংগঠনের পক্ষ থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মৌলবাদকে মদত দেওয়া কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই তারা নেই। বিরোধীদেরও দাবি, মৌলবাদীদের প্রস্তুতি দেখে রাজ্যে ভোট বিভাজনের পরিবেশও তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জেলা ইমামদের সংগঠনের ‘সাম্প্রদায়িক শক্তিকে’ রোখার আহ্বান তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কংগ্রেস এবং বামেরা।