Agriculture

নদী দখল করে চলছে চাষ, অভিযোগ

তেহট্ট ১ ব্লকের রঘুনাথপুর পঞ্চায়েতের নিশ্চিন্তপুর গ্রাম। সেই গ্রামের দক্ষিণ হালদার পাড়ার কাছে গিয়ে পশ্চিমের দিকে তাকালে দেখা যাবে— নিচু জমি, যেখানে চাষ হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তেহট্ট শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২০
Share:

নদীতে মাটি উঁচু করে চাষ। নদিয়ার নিশ্চিন্তপুরে। ছবি: সাগর হালদার।

পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নদী ক্রমশ দখল হয়েই চলেছে। তেহট্টের নিশ্চিন্তপুরে প্রথমে জলঙ্গি নদীর পার বরাবর মাটি ফেলে আল দিয়ে চাষ চলছিল। এখন প্রায় পুরোটাই দখলে। নদী একপ্রকারের নিকাশি হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এই কাজ যে অবৈধ, তা আগেই জানিয়েছে সেচ বিভাগ। তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন, উঠছে সেই প্রশ্ন। এই ভাবে চলতে থাকলে নদী পুরোপুরি বুজে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

তেহট্ট ১ ব্লকের রঘুনাথপুর পঞ্চায়েতের নিশ্চিন্তপুর গ্রাম। সেই গ্রামের দক্ষিণ হালদার পাড়ার কাছে গিয়ে পশ্চিমের দিকে তাকালে দেখা যাবে— নিচু জমি, যেখানে চাষ হচ্ছে। কিন্তু আদতে সেটি নদিয়া তথা তেহট্ট মহকুমার প্রধান নদী জলঙ্গি। অভিযোগ, সেখানেই সামান্য চর পড়ায় বাইরে থেকে মাটি এনে, আল দিয়ে উঁচু করে চলছে চাষের কাজ। কিছু দিন আগেও যেখানে তীর থেকে সামান্য দূর পর্যন্ত চাষ করতে দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল, দক্ষিণ হালদার পাড়ার প্রায় বেশ কয়েকশো মিটার নদীর এক তীর থেকে মাঝ বরাবর পেরিয়ে বেশ কিছুটা অংশ মাটি দিয়ে দখল হয়ে গিয়েছে। সেখানে চলছে চাষ। আর আলের থেকে অন্য পাড়ের শেষ প্রান্তের দিকে তাকালে দেখে মনে হচ্ছে, কোনও নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান দিয়ে জল বইছে।

ওই স্থলে মাটি দিয়ে আল দিচ্ছিলেন এক চাষি। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, “করেকম্মে খাচ্ছি। চর পড়েছে, তাই চাষ হচ্ছে। প্রতি বছর হয়।” ধানের চারা লাগাচ্ছিলেন আরও এক চাষি। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, “সবাই করছে, তাই আমিও করছি। এত দিন কেউ কিছু বলেনি তো?”

Advertisement

তেহট্ট ১ ও ২ ব্লকের পাশাপাশি তেহট্ট মহকুমার একটা বড় অংশের প্রধান নদী জলঙ্গি। পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, স্বরূপগঞ্জ থেকে পলাশিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার জলঙ্গি নদীর অংশকে জাতীয় জলপথ হিসেবে ঘোষিত করেছে ‘ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’। ওই জলপথকে এন ডব্লু ৪৭-রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবুও এই নদী ঘিরে বারবার উদাসীনতার ছবি সামনে এসেছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, ঠিকমতো পরিকল্পনা নিয়ে পুরোপুরি ভাবে নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনায় ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনের তরফে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন, ব্লক অফিস, মহকুমা দফতর, মৎস্যবিভাগ, সেচ দফতর তথা জেলা প্রশাসনের কেউ-ই কি পরিকল্পনা মাফিক নদী বাঁচানোর চেষ্টা করবে না?

পরিবেশকর্মীদের মধ্যে যতন রায়চৌধুরী , শঙ্খ শুভ চক্রবর্ত্তী, প্রলয় কুমার ভট্টাচার্যেরা বলেন,“এইভাবে নদীর তীর এমনকি মাঝের অংশ জবর দখল করতে করতে একটা সময় নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবেনা। প্রশাসন বরাবর কড়া পদক্ষেপ করলে সমাজের একশ্রেণীর মানুষ এই সাহস দেখাতে পারত না। ”

এবিষয়ে দেবগ্রাম জোনের সেচ বিভাগীয় সহকারি ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ সামসুজ্জামান বলেন,“ সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি অবৈধ কিছু দেখলে পুলিশের সহায়তায় ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।” তেহট্ট মহকুমা শাসকের কার্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন,“সেচ বিভাগের সাথে কথা বলে দেখছি।” কবে ব্যবস্থা গ্রহণ হয় এখন সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement