ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও-র তৈরি পেগাসাস স্পাইঅয়্যার ঘিরে ফের বিতর্ক। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আমেরিকার আদালতে পেগাসাস দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর থেকে চর্চা শুরু হয়েছে ভারতেও। তিন বছর আগের পেগাসাস বিতর্ক আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। পেগাসাস স্পাইঅয়্যারের মাধ্যমে এ দেশের প্রায় ৩০০ জনের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। তালিকায় রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধীর মতো বিরোধী নেতারা। আমেরিকার আদালতের রায় প্রকাশ্যে আসতেই ফের পেগাসাস-বিতর্ক নিয়ে সরব কংগ্রেস। কাদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল, মেটা কর্তৃপক্ষকে সেই নামের তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা।
ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও গোষ্ঠীর তৈরি পেগাসাস স্পাইঅয়্যার দিয়ে ১৪০০ হোয়াট্সঅ্যাপ ব্যবহারকারীর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে বলে অভিযোগ। ২০১৯ সালের মে মাসে দু’সপ্তাহ ধরে ওই ব্যবহারকারীদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল বলে দাবি হোয়াট্সঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের। তা নিয়ে আমেরিকার আদালতে পেগাসাসের বিরুদ্ধে মামলা করে হোয়াট্সঅ্যাপ। চলতি সপ্তাহে আমেরিকার নর্থ ক্যালিফোর্নিয়ার ডিস্ট্রিক্ট আদালত পেগাসাসের নির্মাতা সংস্থা এনএসও-কে দুনিয়া জুড়ে ১,৪০০ হোয়াট্সঅ্যাপ ব্যবহারকারীর মোবাইলে আড়ি পাতার জন্য নিশানা করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এর জন্য কতটা কী ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে আগামী বছরের মার্চে পৃথক বিচার শুরু হবে বলে জানিয়েছে আমেরিকার আদালত।
২০২১ সালে পেগাসাস-বিতর্ক খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত ওই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনবে কি না, বা বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখার কথা ভাবছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন কংগ্রেস নেতার। পাশাপাশি ওই ৩০০ ভারতীয়ের নাম মেটা কর্তৃপক্ষের থেকে জানতে চাওয়া হবে কি না, সে বিষয়টিও তুলে ধরেছেন সুরজেওয়ালা। তাঁর বক্তব্য, মেটা কর্তৃপক্ষেরই উচিত পেগাসাসের ‘শিকার’ হওয়া ৩০০ ভারতীয়ের নাম প্রকাশ করা।
পেগাসাস স্পাইঅয়্যার ব্যবহার করে শুধু বিরোধী নেতাদের ফোনেই নয়, শাসক শিবিরের নেতা, সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ীদের উপরে নজরদারি চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। আমেরিকার আদালতের রায় প্রকাশ্যে আসতেই ফের তা নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস। নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে বিঁধে সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, কোন ৩০০ ভারতীয়ের ফোনকে নিশানা করা হয়েছিল? তালিকায় কোন বিরোধী নেতারা রয়েছেন? কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাই বা কারা রয়েছেন আড়ি পাতার তালিকায়? সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “বিজেপি শাসিত সরকার এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলি কোন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছিল? সেই তথ্য কোন কাজে ব্যবহার কিংবা অপব্যবহার করা হয়েছিল?”
২০২১ সালে যখন পেগাসাস-বিতর্কে তোলপাড় হচ্ছে দেশ, সেই সময়ে ফোনে আড়ি পাতা বিতর্কের প্রতিবাদে নিজের মোবাইল ক্যামেরায় স্টিকিং প্লাস্টার লাগিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বছর ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে পেগাসাস-বিতর্কে মোদী সরকারকেও কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তিনি। এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে পেগাসাস-বিতর্কে সরব হয়েছে তৃণমূল শিবির। সূত্রের খবর, আমেরিকার আদালতের রায়ের পর ঘটনাপরম্পরার দিকে নজর রাখছে রাজ্যের শাসকদলও।
ইজ়রায়েলি সংস্থার তৈরি পেগাসাস স্পাইঅয়্যার নিয়ে বিতর্ক শুধু ভারত বা আমেরিকায় নয়, অন্যান্য দেশেও ছড়িয়েছে। পোল্যান্ডে পেগাসাসের বিরুদ্ধে পৃথক একটি তদন্ত শুরু হয়েছে চলতি বছরে। অভিযোগ ২০১৭-২০২২ সালের মধ্যে সে দেশের প্রায় ৬০০ মানুষের উপর আড়ি পাতা হয়েছিল। পোল্যান্ডে সরকার বদলের পরই এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়। কাঠগড়ায় উঠেছে সে দেশের তৎকালীন সরকারের ভূমিকাও।