মঞ্চে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে হুমায়ুন (বাঁ দিকে)। বিধি ভেঙে ভিড় সভায় (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
শেষতক রং বদলেই ফেললেন হুমায়ুন কবীর। সাড়ে পাঁচ বছর পরে ফের তৃণমূলে ফিরে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী চেনা সুরেই বলছেন, ‘‘ভুল সংশোধন করতে দলে ফিরেছি। দল যা নির্দেশ দেবে তাই পালন করব।’’ যা শুনে একদা তাঁর পুরনো দল কংগ্রেস নেতৃত্ব বলছে— ‘ভুল সংশোধনের চেনা লব্জটা বদলায়নি হুমায়ুন!’ এসব টিপ্পনীতে অবশ্য দমছেন না রেজিনগরের প্রাক্তন বিধায়ক। তিনি যে পুরনো দলে ফিরছেন, দিন কয়েক আগে তা আনন্দবাজারকে জানিয়ে ছিলেন তিনি। এ দিন সদলবলে প্রত্যাবর্তণের পরে বহরমপুরের টেক্সটাইল মোড়ের জনসভা থেকে তিনি তোপ দাগলেন, ‘‘মিলিয়ে নেবেন, সামনের বছর নির্বাচনে জেলায় বাইশটি আসনের মধ্যে বাইশটিই পাবে তৃণমূল।’’ দল বদল অবশ্য তাঁর কাছে নতুন ঘটনা নয়। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল ছুঁয়ে বিজেপি ঘুরে ফের তিনি তৃণমূলে ফিরলেন। একদা কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদে অধীর চৌধুরীর দক্ষিণহস্ত হুমায়ুন ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটেই রেজিনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। কিন্তু বছর ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে অধীরের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে তাঁর প্রথম বার দল বদলে পাড়ি দিয়েছিলেন তৃণমূলে। তৃণমূলে যোগ দিয়ে মন্ত্রিত্ব পেতেও দেরি হয়নি তাঁর।
কিন্তু দলের তদানীন্তন জেলা পরিদর্শক শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিবাদের জেরে ২০১৫ সালে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাঁকে। পরের বছরই নির্দল প্রার্থী হয়ে টেবিল চিহ্নে রেজিনগর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে নামমাত্র ভোটে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হারেন। সে বছরই সেপ্টেম্বরে তাঁর পুরনো রাজনৈতিক ‘গুরু’ অধীর চৌধুরীর প্রস্তাবে ফের কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন। ২০১৮ সালে কংগ্রেসের হয়ে প্রবল দাপটে পঞ্চায়েত ভোট করান তিনি। তবে সেই প্রত্যাবর্তনও স্থায়ী হয়নি। ২০১৮ সালে কৈলাস বিজয়বর্গীয় হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। পরে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থীও হন। কিন্তু পরের বছর, এনআরসি নিয়ে আন্দোলনের জেরে বিজেপি-র সঙ্গে মত পার্থক্যের শুরু এবং বিজেপি ত্যাগ হুমায়ুনের।
এ দিন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খানের হাত থেকে পতাকা তুলে নেন তিনি। মঞ্চের সামনে থিকথিকে ভিড়, শিকেয় উঠল দূরত্ববিধি। উপস্থিত সমর্থকদের অধিকাংশের মুখে ছিল না ফেসকভার।
অথচ দিন পনেরো আগে এই স্বাস্থ্যবিধিকে মান্যতা দিয়েই তৃণমূল নেত্রী ২১শে জুলাইয়ের সভা বাতিল করেছিলেন। এ ক্ষেত্রেও সেই ব্যবস্থা করা গেল না কেন? আবু তাহের বললেন, “মানুষের আবেগের কাছে আমরা অসহায়। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”
বহরমপুরে হুহু করে বাড়ছে করোনার প্রকোপ। অথচ সেই সময় এমন সভার অনুমতি দিল কেন পুলিশ? প্রশ্ন কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের।
জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত বিশ্বাস বলছেন, “স্বাস্থ্যবিধি না মানায় শাসকদলের ক্ষেত্রে পুলিশের লাঠি, কানধরে ওঠবোস কোথায় গেল? বিধি কি শুধু বিরোধীদের জন্য!”