হুমায়ুন কবীর। — ফাইল চিত্র।
কলকাতায় দলের বিশেষ অধিবেশন থেকে জেলায় ফেরার পরদিনই সালারে সভা করলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। শুক্রবারের এই সভায় তিনি বলেন, “কয়েক জন তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বিষয়টি বিচারাধীন। তৃণমূলকে চোরের দল বললে আমরা কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না। রাজনৈতিক ভাবেই এর যোগ্য জবাব দেব।”
কয়েক মাস পরেই পঞ্চায়েত ভোট। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, তার আগে বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পরিবর্তন হওয়ায় নিচুতলার নেতা-কর্মীদের অনেকে ভোটের টিকিট পাওয়া নিয়ে সংশয়ে। এই আবহে হুমায়ুন এ দিন বলেন, “ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলে আমিই শেষ কথা। আমার উপর কোনও কথা হবে না। সেটা পঞ্চায়েতের টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রেই হোক বা অন্য বিষয়ে। দলের মূল সংগঠন ও শাখা সংগঠনে আমার উপর কেউ নন, এটা মনে রাখবেন।”
এর আগে এ দিন রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হুমায়ুন। ফোনে তিনি বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের পর এক বছর লেগে গেল ব্লক কমিটি তৈরি করতে। ২০২১ সালের ১৬ অগস্ট জেলা সভাপতিদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা অ্যাডহক হিসেবে এক বছর ইচ্ছে মতো দল পরিচালনা করলেন এই জেলায়। প্রবীণরা কোনও গুরুত্ব পেলেন না সেখানে। সব শেষে এ বছর ১৭ অগস্ট যে ব্লক কমিটি তৈরি হল, সেখানে অধিকাংশ বিধায়কের দাবির সঠিক মূল্যায়ন হল না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সংগঠনকে এক সুতোয় গেঁথে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগে দিন কাটছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ঘরের মধ্যে ঘর উঠছে রাজ্য নেতৃত্বের মদতেই।” এর আগেও একাধিক বার দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন হুমায়ুন। এ দিন নিজেই সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “এক সময় অধীর চৌধুরীর ভুলে কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। আবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রেখে বিধায়ক পদ ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছিলাম।” তাঁর দাবি, কংগ্রেস থেকে তিনি ছাড়াও সেই সময় আরও কয়েক জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে বিধায়ক বা সাংসদ পদে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কেউ পদ ছেড়ে নতুন দলে যোগ দেননি। তাঁর ক্ষোভ, “আমার পরে যাঁরা কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগদান করেছেন নিজেদের বিধায়ক বা সাংসদ পদ না ছেড়ে, আজ তাঁদের কেউ সাংসদ, কেউ জেলা সভাপতি, কেউ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাকে কোনও সম্মানজনক পদ দেওয়া হয়নি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “এখন যাঁরা দলটাকে রাজ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের কাছে সাক্ষাতের সময় পাওয়া যায় না। তাঁদের সঙ্গে দেখা করে জেলার কোনও অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে বলার সুযোগ নেই। এই দুঃখ নিয়েই রাজনীতি করতে হচ্ছে।”
তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ বহরমপুর ইউনিটের সভাপতি শাওনী সিংহরায় হুমায়ুনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, “কেন তিনি এই ধরনের দলবিরোধী কথা বলেছেন, তা আমি জানি না। ওঁর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।” জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস হুমায়ুনের সমালোচনা করে বলেন, “হুমায়ুন কবীর নিজেকে বিতর্কের জালে আবদ্ধ রেখে ভেসে থাকতে পছন্দ করেন। ওঁর ধারণা, তিনিই সেরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।’’ তাঁর একাধিক বার দল বদলের প্রসঙ্গ উস্কে দিয়ে জয়ন্ত আরও বলেন, “একদিন তৃণমূলের পতাকা ছেড়ে বিজেপির পতাকার নীচে এসেছিলেন। লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন। এ বার কি অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলেরপতাকা ধরবেন?”
হুমায়ুন অবশ্য স্পষ্ট করে দেন, “এই দল ছেড়ে অন্য দলে যাওয়ার কোনও ইচ্ছেই আমার নেই। কিন্তু দল করছি বলেই সেই দল অন্যায় করে যাবে আর সেই অন্যায় মেনে নেব, আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়।”