চলে এল নলেন গুড়ের মরসুম। —প্রতীকী চিত্র।
হিমেল বাতাস। দক্ষিণবঙ্গকে ছুঁয়েছে শীতের আমেজ। তার হাত ধরেই চলে এল নলেন গুড়ের মরসুম।
এখনও জাঁকিয়ে ঠান্ডা না পড়লেও হিমালয়ের বাধা পেরিয়ে উত্তরের হাওয়ায় ভর করে চলতি সপ্তাহেই বাংলায় শীত প্রবেশ করেছে। আবহাওয়া দফতর বলছে, আগামী কয়েক দিনে উত্তুরে হাওয়ার দাপটে পারদ নামবে আরও। তবে ঠান্ডাটা জাঁকিয়ে না পড়া পর্যন্ত ভাল খেজুরের রস মিলবে না। আপাতত রসের জোগান না থাকায় গুড়ের চাহিদা সত্ত্বেও সরবরাহ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে ভেজাল গুড়ের কারবার। বাজার ছেয়ে গিয়েছে হাইড্রোজ, ফটকিরি, ক্যালশিয়াম-বাই-কার্বনেট, নলেন গুড়ের সুবাসিত গন্ধ-সমৃদ্ধ প্রোপিলিং গ্লাইকল নামে কৃত্রিম রাসায়নিক মেশানো ভেজাল গুড়ে।
তা হলে পিঠেপুলির মরসুমে কী ভাবে চিনবেন আসল নলেন গুড়?
চেখে নিন, বুঝে যাবেন:
খেজুর গুড় কেনার সময় দোকান থেকে অল্প একটু গুড় নিয়ে জিভে ফেলুন। নোনতা স্বাদ পেলে ওই দোকান থেকে গুড় না কেনাই ভাল।
ভেজালের রমরমা বাজারে নির্ভেজাল খেজুর গুড় চেনা এবং বোঝার উপায় বাতলে দিয়েছেন শিউলি রহমান আলি। দীর্ঘ দিনের গুড় ব্যবসায়ী রহমান। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল গুড় কিনতে গেলে কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে। আসলে খাঁটি নলেন গুড় চেনা খুবই সহজ। প্রথমে যেটা করবেন, গুড় কেনার সময় তা সামান্য পরিমাণ নিয়ে জিভে দেবেন। যদি নোনতা স্বাদ পান, তা হলে বুঝে নেবেন ওই গুড়ে ফটকিরি মেশানো আছে।’’
গুড়ে ফটকিরি নেই তো?
গুড় ভেঙে একটু মুখে দিয়ে দেখতে হবে, স্বাদ কেমন! নোনতা লাগলে বুঝতে হবে গুড়ে ফটকিরি মেশানো আছে।
আঙুলের আলতো চাপে ভেঙে যাবে খাঁটি গুড়ের ডেলা:
আসল নলেন গুড়ের পাটালি আঙুলের হালকা চাপে ভেঙে যায়। ভেঙে গেলে বুঝবেন খাঁটি পেয়েছেন। পাথরের মতো শক্ত হলে? ঠকেছেন।
রং দেখে গুড় চিনুন:
গুড়ের দানা স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ হলে বুঝবেন ওতে নিশ্চিত ভাবে চিনি মেশানো আছে। সাধারণত গুড়ের রং হয় গাঢ় বাদামি। তাই গাঢ় লাল কিংবা খয়েরি রঙের গুড় দেখলেই বুঝতে হবে তাতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক মেশানো আছে। যা শরীরের পক্ষেও ক্ষতিকারক।
গন্ধে আমোদিত হয়ে গুড় কিনে ফেলবেন না:
শুধু মাত্র সুবাসিত গন্ধে মেতে গিয়ে চোখ বন্ধ করে নলেন গুড় কিনে নেন? ভাবেন খাঁটি জিনিস পেয়েছেন? তা হলে নিতান্তই বোকামি করছেন। কারণ, গুড়ে সুবাসের জন্য আজকাল রাসায়নিক ব্যবহার হয়।
খাদ্য নিরাপত্তা আধিকারিক সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রত্যেক বছর নিয়ম করে মরসুমের শুরুতেই স্পেশাল ড্রাইভ চালানো হয়। গত বছর মে-জুন মাসে নলেন গুড়ের বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে কী ধরনের রাসায়নিক কতটা পরিমাণে মেশানো হচ্ছে বা আদৌ হচ্ছে কি না।’’
নদিয়া জেলার বিস্তীর্ণ অংশ— মূলত সাহেবনগর, পলাশি, চাপড়া, করিমপুর, শিকারপুর, কিশোরপুর, কুলগাছি, মাজদিয়ার তৈরি নলেন গুড় পৌঁছে যায় কৃষ্ণনগর-সহ জেলার একাধিক বাজারে। এ ছাড়া, কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মাজদিয়াতে গুড়ের হাট বসে। নভেম্বর মাসের শেষ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে ভাল গুড় মেলে।