সকাল নাকি বলে দেয় দিন কেমন যাবে!
নবাব-জেলার পাঁচকড়ি দত্ত এত দিন কথাটা স্রেফ শুনে এসেছেন। মানেও বুঝেছেন। কিন্তু কানের ভিতর দিয়ে এক্কেবারে মরমে ঢুকল
এই বিষ্যুদবার।
তা বারটা খারাপ না। লক্ষ্মীবার। অনেকে নিরামিষ খান। পাঁচকড়ি মানে পাঁচুর হাতে গিন্নির ধরানো একটা লম্বা লিস্টি। সামনে এক কাপ লিকার চা। চিনি ছাড়া।
খবরের কাগজ লোকজন পড়েন। পাঁচু অবশ্য জেরক্স মেশিনের মতো স্ক্যান করেন। কেউ কেউ আবার টিপ্পনী কাটেন, ‘‘স্ক্যান নয় গো, ধ্যান, ধ্যান!’’
তো স্ক্যান কিংবা ধ্যান করতে করতে সবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছেন পাঁচু, অমনি তাঁর বছর দশেকের ছেলে ছুড়ে দিল, ‘‘কাটমানি কী গো বাবা!’’
ইংলিশ মিডিয়ামের স্মার্ট দস্যির ‘এটা কী’, ‘ওটা কী’ প্রায়ই সামলে দেন পাঁচুদা। খুব বিপদে পড়লে চট করে এক বার গুগুলও করে নেন। কিন্তু এ বঙ্গের অন্যতম হইহই কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন শুনে প্রথমে বেজায় একটা বিষম খেলেন পাঁচুদা। চলকে পড়ল চা। তার পরে সামলে নিয়ে মহম্মদ শামির কায়দায় পাল্টা ছুড়ে দিলেন, ‘‘হাবিজাবি না ভেবে আগে হোমটাস্ক শেষ করো দিকি!’’
‘আজকাল ছোটরা বড্ড তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে!’’, বিড়বিড় করতে করতে তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেরোলেন পাঁচকড়ি। কিন্তু পালানোর কি আর জো আছে? চায়ের দোকানে ঢুকতেই সেই এক প্রশ্ন—‘কী, পাঁচুদা কাটমানি কি সব ফেরত আসবে? তোমার কী মনে হয়?’
পাঁচু কী যেন একটা বলতে যাচ্ছিলেন। তার পরে চুপ। এবং দীর্ঘ নীরবতা। যে নীরবতা মনে পড়িয়ে দিচ্ছিল প্রাক্তন এক প্রধানমন্ত্রীর কথা বলার কায়দা। তার পরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাঁচু বললেন, ‘‘সব পাখি কি আর ঘরে ফেরে! নাকি ফেরানো যায়!’’
খেই ধরেন শিবেন মুখুজ্জে, ‘‘কাব্যি কাব্যি গন্ধ থাকলেও কথাটা ঠিক। এত কাঠখড় পুড়িয়ে কালো টাকাই দেশে ফিরল না! আর ‘আয়, আয়’ কিংবা ‘ফিরিয়ে দিন’ বললেই কি আর কাটমানি ফিরে আসবে? এ কি খোকনসোনা!’’
থলে নিয়ে বাজারে যেতে যেতে আনাজের দাম নয়, পাঁচুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার শতাংশের হিসেব। কিন্তু কত লক্ষ টাকা? তা তো পাঁচু জানেন না। বাকিরাও কি জানেন? কোন দিন, কত টাকার কত শতাংশ কোন খাতে কে কাকে দিয়েছেন!
শুধু পাঁচু বাড়ি ফিরতেই তাঁর ছেলে গুগল থেকে নামানো ছবিটা (বাঁ দিকে) দেখিয়ে বলল, ‘‘ইউরেকা! এই দেখো বাবা কাটমানি!’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।