কেন দিলি ভোট, আক্রমণ চলছেই

শুক্রবার জোটপ্রার্থীর এক পোলিং এজেন্টের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া নিয়ে অশান্ত হয়েছিল হরিণঘাটা। রাতে সিপিএমের নেতাদের বাড়ির সামনে বোমাবাজি করা হয়। শনিবার সকালে সেখানেই মল্লিকপাড়ায় জোটের আর এক এজেন্টের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় তৃণমূলের বাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী ও চাকদহ শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৭
Share:

-ভাঙল জানলার কাঁচ।-নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলের বিরোধিতার ভার এখনও বইতে হচ্ছে নদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার জোটকর্মীদের।

Advertisement

শুক্রবার জোটপ্রার্থীর এক পোলিং এজেন্টের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া নিয়ে অশান্ত হয়েছিল হরিণঘাটা। রাতে সিপিএমের নেতাদের বাড়ির সামনে বোমাবাজি করা হয়। শনিবার সকালে সেখানেই মল্লিকপাড়ায় জোটের আর এক এজেন্টের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় তৃণমূলের বাহিনী। বোমাবাজি হয়েছে গয়েশপুরেও। বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন পশু চিকিৎসক। যদিও তিনি থানায় অভিযোগ জানাননি। কল্যাণী শহরে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়।

শুক্রবার রাতেই নগরউখড়ায় হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শঙ্কর দেবনাথের বাড়ির সামনে বোমাবাজি করে তৃণমূলের বাহিনী। বাড়ির লোকেরা পালিয়ে অন্য একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ গেলে দুষ্কৃতীরা পালায়। সিপিএমের হরিণঘাটা-২ লোকাল সম্পাদক অপূর্ব সুন্দর রায়ের বাড়ির সদর দরজা ভেঙেও বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে তৃণমূলের লোকেরা। পুলিশ এসে পড়ায় তারা সরে যেতে বাধ্য হয়। সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতেও হুমকি দিয়েছে তৃণমূলের বাইক বাহিনী।

Advertisement

ওই রাতেই গয়েশপুর কাঁটাগঞ্জে বোমাবাজি করে এক দল দুষ্কৃতী। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন পশু চিকিৎসক পার্থসারথি চক্রবর্তী। দু’টি পা জখম হওয়ায় কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয় তাঁকে। গভীর রাতে কল্যাণী বোর্ড পার্কে এক সিপিএম সমর্থকের ভাড়াবাড়িতে চড়াও হয়ে দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর চালায় বলেও অভিযোগ। যদিও দু’জনের কেউই পুলিশে অভিযোগ জানাননি।

তৃণমূল অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল বিশ্বাসের দাবি, ‘‘আমাদের ছেলেরা সংযত রয়েছে। সিপিএমের হাজার প্ররোচনা সত্ত্বেও ফাঁদে পা দেয়নি। তা না হলে অশান্তি হত।’’ তাঁকে মারধরের ঘটনায় শনিবার হরিণঘাটা বাজারে প্রতিবাদ সভা হয়। প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল।

শুক্রবার রাতেই চাকদহ পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পিকনিক গার্ডেন এলাকার ১ নম্বর ঠাকুর কলোনিতে মুখে কাপড় বেঁধে, হাতে বাঁশ-লাঠি-ইট নিয়ে হানা দেয় তিরিশ-চল্লিশ জন দুষ্কৃতী। একের পর এক বাড়ির দরজা, জানালার কাচ গুড়িয়ে দেয় তারা। দরজার গ্রিলে বাঁশ-লোহা দিয়ে মারে। প্রতিবাদ করায় এক জনকে মারধরও করে তারা। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার ভোট দিতে যাওয়াটাই কাল হয়েছে। সেই আক্রোশেই তৃণমূলের লোকেরা বিভিন্ন বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়েছে। সিপিএমের চাকদহ ১ লোকাল সম্পাদক স্বর্ণেন্দু দত্তের অভিযোগ, ‘‘শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৃণমূলের লোকেরা ভাঙচুর চালাচ্ছে, মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে।’’ যদিও তৃণমূল তা উড়িয়ে দিয়েছে।

হামলার সঙ্গে গ্রেফতারিও চলছে পাল্লা দিয়ে। হরিণঘাটার পারুলিয়ায় জোটের পোলিং এজেন্ট সুকুর আলি মণ্ডলের বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনায় পুলিশ দুই তৃণমূল সমর্থক গ্রেফতার করেছে। প্রাক্তন মন্ত্রী বঙ্কিম ঘোষ-সহ সিপিএমের নেতাদের মারধর করার ঘটনাতেও গ্রেফতার হয়েছে তৃণমূল কর্মী। হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল বিশ্বাসকে মারধর এবং থানার সামনে বিক্ষোভের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে সিপিএমের ২১ জন কর্মী-সমর্থক। শনিবার কল্যাণী আদালতে তোলা হলে আট তৃণমূল কর্মীর জামিন নাকচ হয়ে যায়। সিপিএমের এক জন কর্মী ছাড়া সকলেই অবশ্য জামিন পেয়ে গিয়েছেন। বঙ্কিমবাবু ও চঞ্চলবাবুর বিরুদ্ধে একই ধারায় মামলা শুরু করেছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement