চুল কাটতে স্কুলে নাপিত

জনা কয়েক ছাত্রের চুলের বাহার দেখে হকচকিয়ে গিয়ে অস্ফূটে বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘এটা কি স্কুল!’’

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৩৮
Share:

১৮ বছরের নিউ ফরাক্কা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তাই নোটিশ পড়েছে— আগামী ৮’ই অগস্ট নাপিত ভাইদেরকে নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সভার আয়োজন করা হয়েছে।’

সদ্য বদলি হয়ে এসেছেন। লম্বা বারান্দা ধরে ঘুরে দেখছেন পড়ুয়াদের। কোথাও বোলচাল বেঠিক দেখলে একটু গলা খাকারি। চোখটা থমকে গিয়েছিল একাদশ শ্রেণির ক্লাসে।

Advertisement

জনা কয়েক ছাত্রের চুলের বাহার দেখে হকচকিয়ে গিয়ে অস্ফূটে বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘এটা কি স্কুল!’’ শুধু তাই নয়, কান পেতে শুনলেন শিক্ষকের আপ্রাণ পড়ানোর মাঝে হিন্দি গানের সুরে অনর্গল বেজে চলেছে মোবাইলের রিংটোন।

নিউ ফরাক্কা হাইস্কুলের নবাগত প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘ঘাবড়েই গিয়েছিলাম বুঝলেন! সাহস করে ঢুকে তাই জানতে চাইলাম, হ্যাঁরে এ ভাবে চুল কি ভুল করে কেটেছিস?’’

Advertisement

মনিরুল বলছেন, ‘‘ছেলেটির হাসি দেকে মাথায় রক্ত চড়ে গেল। বুঝলাম, অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে!’’ বেয়ারা ছাত্রদের ঢিট করতে, মোবাইল ফোনের উপরে ফতোয়া, চুলের বাহার নৈব নৈব চ— জানিয়ে দিয়েছেন নব্য প্রধান শিক্ষক।

দিন কয়েক দেখেই তিনি বুঝেছিলেন, সহজ অনুরোধে কাজ হবে। তলব করলেন বাড়ির লোক। অসহায় অভিভাবক জানিয়ে গিয়েছিলেন, ‘‘বহু চেষ্টা করেছি স্যার, ছেলেকে পথে আনতে পারিনি। যা ভাল বুঝবেন করবেন!’’

প্রধান শিক্ষক বলছেন, “ভাল করে খুঁটিয়ে দেখলাম, স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসে এক-দু’জন নয়, স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রেরই বিচিত্র সব কেশ বিন্যাস। কারও চুলের কাটিং বিখ্যাত কোনও ক্রিকেটারের মত, কারও বা ফিল্মি তারকার নকল। কারও বা চেনা কোনও বিশ্বকাপার ফুটবলারের চুলের ছাঁট দিয়ে স্কুলে আসছে। পনেরো দিন সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও ফল হল না। তাই ঠিক করলাম যা করার নিজের মতো করেই করতে হবে।’’

১৮ বছরের নিউ ফরাক্কা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তাই নোটিশ পড়েছে— আগামী ৮’ই অগস্ট নাপিত ভাইদেরকে নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সভার আয়োজন করা হয়েছে।’ যার সার কথা, চুল কেটে না এলে ওই সভাতে বসিয়েই বাহারি চুলের ছাঁটকাট করা হবে।

পরিচালন সমিতির সভাপতি সাহাজাদ হোসেন বলছেন, “স্কুলে কিছু শৃঙ্খলা থাকা আবশ্যক ছিল। তাই নতুন প্রধান শিক্ষক অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তার সূত্র ধরেই ওই দিন যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেওয়া হবে। তবে কোনও বেয়ারাপনাকে প্রশ্রয় দেওয়া আর হবে না।’’

স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজুয়ানুল ইসলাম বলছেন, “১২ বছর ধরে স্কুলের দায়িত্বে ছিলাম। ছাত্রদের বাইক নিয়ে স্কুলে আসা, চুলের বাহার, মোবাইল নিয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করতে বহু চেষ্টা করেছি। কাজে দেয়নি। এ বার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মনিরুল সাহেব নেবেন।’’

ওই দিনই হয়, নাপিতের এক দিন না হয় বেয়াড়া ছাত্রদের!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement