ডাকে মাদক পাচার! প্রতীকী চিত্র।
ডাকঘরের মাধ্যমে পার্সেল পাঠিয়ে অভিনব উপায়ে মাদক পাচারের চেষ্টা করেছিল পাচারকারীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ধরা পড়ে গেল স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর হাতে। তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে পাচারকারীদের নিত্যনতুন কৌশল পুলিশের কপালে ভাঁজ ফেলেছে।
মণিপুরের সেনাপতি জেলা থেকে ডাক-মাধ্যমে নদিয়ায় পাঠানো হয়েছিল একটি রহস্যময় পার্সেল। সেই পার্সেল যে সন্দেহজনক, তা গোপন সূত্রে আগেই জানতে পারে এসটিএফ। সেই মতো বিষয়টি জানানো হয়েছিল ডাক বিভাগকেও। শুক্রবার ওই পার্সেল এসে পৌঁছয় নদিয়ার পলাশি পোস্ট অফিসে। ওই পার্সেল পাঠানোর কথা ছিল নদিয়ার ছোট চাঁদঘর এলাকায়। এসটিএফের নির্দেশ মতো ওই পার্সেল আলাদা করে রেখে দেন ডাক বিভাগের কর্মীরা। যাঁর নামে ওই পার্সেল, তাঁকে পোস্ট অফিসে তলব করা হয়। সেই সময় ওঁত পেতে ছিল এসটিএফ। তবে যাঁর নামে ওই পার্সেল, তিনি নিজে না এসে আব্বাস মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে পাঠান ডাকঘরে। আব্বাসকে গ্রেফতার করেছে এসটিএফ। ওই পার্সেল থেকে মিলেছে প্রায় আড়াই কেজি পোস্ত গাছের আঠা!
এসটিএফ জানতে পেরেছে, নদিয়ার পলাশি, বড় নলদাহ, ছোট নলদাহ, চাঁদঘর এবং বাউর এলাকায় মাদক চোরাচালানকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মুর্শিদাবাদের লালগোলা এবং বাংলাদেশ থেকে মাদক তৈরির ‘দক্ষ কারিগর’ আনা হয়েছে বলেও খবর পেয়েছে এসটিএফ। এই আবহে ভিন্ রাজ্য থেকে যে নদিয়ায় মাদকের কাঁচামাল আনা হচ্ছিল, সে বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত ছিলেন গোয়েন্দারা। আর নদিয়ায় তৈরি করা হেরোইন জেলার গণ্ডি পেরিয়ে পড়শি জেলা, এমনকি পাশের রাজ্যেও পাড়ি দিচ্ছিল বলে জানতে পেরেছে এসটিএফ।
এই কাঁচামালকে পরিভাষায় বলা হয় ‘ক্রুড’। কোথা থেকে ওই ‘ক্রুড’ আনা হচ্ছে সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করে এসটিএফ। সম্প্রতি দমদমের একটি আবাসন থেকে মণিপুরের দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। এর পরে পলাশি পোস্ট অফিস থেকে মাদকের কাঁচামাল উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। তাতে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। এসটিএফের তৎপরতায় এ যাত্রা মাদক তৈরির কাঁচামাল ধরা পড়েছে। কিন্তু পাচারের এই নিত্যনতুন কৌশল চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পুলিশের কপালে।
ডাক বিভাগের নদিয়া উত্তর ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রবাল বাগচী বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। পার্সেল স্ক্যান করার কোনও পরিকাঠামো আমাদের নেই। তা করা হলে ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। ভবিষ্যতে করা হবে কি না, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। তবে আমরা প্রশাসনকে সব রকম সহযোগিতা করব।’’