তপ্ত আষাঢ়ের সঙ্গী

লু আর লোডশেডিং

জ্যৈষ্ঠের সাংঘাতিক গরমে গলদঘর্ম হয়ে শ্বশুরবাড়িতে যত্ন করে সাজিয়ে দেওয়া চর্বচোষ্যলেহ্যপেয়-তেও সেই তৃপ্তি পেলে না। তার চেয়ে আষাঢ়ের ঝরঝর বাদলের শীতলতায় শরীর-মন ঠাণ্ডা করে সামনে সাজিয়ে রাখা সার-সার বাটি থেকে অসামান্য সব পদের রসাস্বাদন অতুলনীয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

বহরমপুর ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৮ ০১:৫০
Share:

হাতপাখা কেনার হিড়িক। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

আষাঢ়ের খবরে প্রবল আশ্বাস পেয়েছিলেন জামাই বাবাজীবনেরা।

Advertisement

জ্যৈষ্ঠের সাংঘাতিক গরমে গলদঘর্ম হয়ে শ্বশুরবাড়িতে যত্ন করে সাজিয়ে দেওয়া চর্বচোষ্যলেহ্যপেয়-তেও সেই তৃপ্তি পেলে না। তার চেয়ে আষাঢ়ের ঝরঝর বাদলের শীতলতায় শরীর-মন ঠাণ্ডা করে সামনে সাজিয়ে রাখা সার-সার বাটি থেকে অসামান্য সব পদের রসাস্বাদন অতুলনীয়। এমন সৌভাগ্য বড় একটা হয় না। এ বছর জামাইষষ্ঠী জ্যৈষ্ঠ থেকে পিছিয়ে পড়েছে আষাঢ়ে।

কিন্তু প্রকৃতি জামাইদের প্রতি নির্দয়। তা না-হলে আষাঢ় মাসে এমন বৃষ্টিহীন বেআক্কেলে গরম কখনও পড়ে! জামাইষষ্ঠীর মাস বদলে কোনও লাভই হল না। তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ৩৯ থেকে ৪১ এর মধ্যে। বৃষ্টির বদলে আষাঢ়ে বইছে লু! তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো জাঁকিয়ে বসেছে লোডশেডিং। সুন্দর করে সাজগোজ করা হোক বা খাওয়াদাওয়া, কোনওকিছুরই সুখ নেই এই তাপে। শুধুই হাঁসফাঁস করা। অনেক জামাই তো আগে থেকে বলে রেখেছেন, শ্বশুরবাড়ির যে ঘরে এসি লাগানো রয়েছে সেখানেই যেন খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয়। তবে তাতেও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। কারণ, লোডশেডিংয়ের বহর। বিশেষ করে গ্রামের দিকে গত কয়েক দিন ধরে যা মাত্রাছাড়া হারে চলছে। বিদ্যুৎই যদি না থাকে তা হলে আর এসি চলবে কী করে? তখন ভরসা শাশুড়ি ঠাকরুন কিম্বা শালীদের হাতপাখার বাতাস। খানিক ফিচেল জামাইরা রসিকতা করে বলেও ফেলছেন, ঠিক যেন পঞ্জিকার পাতায় দেওয়া জামাইষষ্ঠীর চেনা ছবি। আষাঢ় মাসেও ছবির পরিবর্তন নেই।

Advertisement

সতর্কতা

• দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার স্নান করা যেতে পারে।

• ফুটি, শসার মতো জল-যুক্ত ফল বেশি করে খাওয়া দরকার।

• ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে।

• রোদচশমা আর ছাতা নিয়ে বাইরে বেরোনো ভাল।

• পানীয় জলে নুন বা ওআরএস মিশিয়ে খাওয়া চাই।

• ভারী আর মশলাদার খাবার একেবারেই নয়।

• রোদ থেকে ঘুরে এসেই ঠান্ডা জল খাওয়া চলবে না।

• যতটা পারা যায় রোদ থেকে দূরে থাকা দরকার।

গত রবিবার সকাল থেকে যেমন বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। কান্দি-বেলডাঙা-ভগবানগোলা-গোকর্ণ এলাকায় দফায় দফায় লোডশেডিং হয়েছে। বহরমপুরেও বিভিন্ন জায়গায় লোডশেডিং হচ্ছে। গরম থেকে বাঁচতে বহরমপুর-কান্দি-লালবাগ-ডোমকল-বেলডাঙা-রঘুনাথগঞ্জের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর দোকানে গত এক সপ্তাহে টেবিল ফ্যান ও স্ট্যান্ড ফ্যান, রেফ্রিজারেটর, সিলিং ফ্যান, এসি, এয়ারকুলার—সব কিছুর বিক্রি বেড়েছে। সকাল ১০টার পরে বহরমপুর বা কৃষ্ণনগরের মতো শহরে রাস্তাঘাট শুনশান হয়ে যাচ্ছে। নাকমুখ কাপড়ে ঢেকে চোখে সানগ্লাস, মাথায় ছাতা বা টুপি পড়ে চলেছেন পথচারীরা। কমে গিয়েছে মোটরবাইক-সাইকেল আরোহী এবং বাসযাত্রীদের সংখ্যা।

গরমের এমন নমুনা চিন্তায় ফেলেছে চিকিৎসকদেরও। কারণ, তাঁদের কাছে প্রতিদিনই সানস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, পেটের গোলমাল নিয়ে রোগীরা আসছেন। চিকিৎসকেরা জানান, এই রকম আবহাওয়ায় শরীরে জল বেশি দরকার, তবে শুধু জল খেলে হবে না। বরং তাতে হিতে বিপরীত হয়ে শরীরের জল বেশি বেরিয়ে যেতে পারে। এক গ্লাস জলে এক চিমটে নুন আর একটু চিনি মিশিয়ে খাওয়া দরকার। যাঁরা ডায়বেটিসের রোগী তাঁরা নুন বাদ দিয়ে শুধু চিনি মেশাবেন। রাস্তার খাবার, বিশেষ করে কাটা ফল, তেলেভাজা খাবার এই সময় না-খাওয়াই উচিত। মাথা ঢাকা দেওয়া এবং সুতির পোশাক পরা উচিত। গরম ছুটির শেষে এখন সবে স্কুল-কলেজ খুলতে শুরু করেছে। কিন্তু গরমের ধাক্কায় এখনও স্কুলে পড়ুয়ারা নিয়ম করে স্কুলে যেতে পারছেন না। নদিয়ার ধর্মদা গার্লস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীবাস দাস ও অভয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানালেন, প্রচণ্ড গরমে পড়ুয়াদের হাজিরা কমে গিয়েছে। পাছে লু লেগে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েন সেই ভয়ে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের পাঠাতে চাইছেন না। তবে স্কুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement