অরুণ নন্দী
নবদ্বীপের সিপিএম নেতা অরুণ নন্দী হত্যা মামলায় অরুণবাবুর ছেলেকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থিত করলেন না সরকারি কৌঁসুলি। শনিবার এই মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল অরুণবাবুর ছেলে অর্পণ এবং অরুণবাবুর এক ভাগ্নি সুস্মিতা দাসের। শনিবার শুনানি শুরু হতেই সরকারি কৌঁসুলি দেবাশিস রায় নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক সুধীর কুমারের কাছে লিখিত ভাবে জানান, এই মামলায় অর্পণ নন্দীর সাক্ষ্যের প্রয়োজন নেই। বিচারক তাঁর আবেদন মঞ্জুর করেন। এ দিন অরুণবাবুর ভাগ্নি সুস্মিতা দাস একাই সাক্ষ্য দান করেন।
এ দিন বেলা সাড়ে বারোটার কিছু পরে শুরু হয় শুনানি। আদালত কক্ষে তখন উপস্থিত মামলার দুই অভিযুক্ত নবকুমার দত্ত এবং অরুণ নন্দীর স্ত্রী উৎপলা দেবী। সরকারি কৌঁসুলি দেবাশিস রায়ের প্রশ্নের উত্তরে সুস্মিতা দাস আদালতে জানান তিনি নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাড়ি নবদ্বীপ তেলি পাড়ায়। অরুণ নন্দী সম্পর্কে মামা। তিনি ক্লাস সেভেন থেকেই ওলাদেবীতলায় মামা অরুণ নন্দীর বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতেন। অরুণবাবু খুন হওয়ার সময় তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী ছিলেন। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ, যে রাতে অরুণবাবু খুন হয়েছিলেন সে দিন তিনি মামারবাড়ি ছিলেন না। ছিলেন তেলিপাড়ায় বাবার বাড়িতে। এপ্রিল ভোর বেলায় জানতে পারেন তার মামা খুন হয়েছেন। খবর শুনে তিনি মামারবাড়ি চলে আসেন এবং মামিমার কাছে জানতে পারেন ডাকাতের হাতে খুন হয়েছেন মামা। কিন্তু তিনি এ কথা বিশ্বাস করেননি।
সরকারি কৌঁসুলির প্রশ্নোত্তর পর্বে সাক্ষী আদালতে উপস্থিত তার মামিমা উৎপলা নন্দী এবং নবকুমার দত্তকে শনাক্ত করেন। তিনি কী ভাবে নবকুমার দত্তকে চিনলেন, দেবাশিস রায়ের এই প্রশ্নের উত্তরে সুস্মিতা আদালতে জানান মামা না থাকলে নবকুমার দত্ত মাঝে মধ্যেই মামার বাড়িতে আসতেন এবং উৎপলাদেবী তাঁকে দোতলায় মামার ঘরে নিয়ে যেতেন।
সরকারি কৌঁসুলির প্রশ্নোত্তর শেষ হতেই সুস্মিতা দাসকে জেরা শুরু করেন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা। এ দিন দিলীপ চট্টোপাধ্যায়, সুবীর দেবনাথ এবং জয়দীপ মিত্র উৎপলা নন্দীর পক্ষে ও অশোক মুখোপাধ্যায় নবকুমার দত্তের পক্ষে জেরা করেন সাক্ষীকে।
দিলীপবাবু প্রথমেই জানতে চান সাক্ষীর মামা অরুণ নন্দী নবদ্বীপ পুরসভায় এবং মামী উৎপলা নন্দী নবদ্বীপ হাসপাতালে চাকরি করতেন এবং তাঁদের দু’জনের আয়ে মামাবাড়ির সংসার চলত এ কথা কী ঠিক? সুস্মিতা দাস বলেন ‘হ্যাঁ’। জানতে চান মামা-মামীর আয় থেকেই সাক্ষীর পড়াশুনা এবং গৃহশিক্ষকের সব খরচ চলত কিনা। জবাবে সাক্ষী বলেন হ্যাঁ। এরপর তিনি জানতে চান ক্লাস এইটে ওঠার পর মামী তাকে একটি সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন কিনা। উত্তরে সাক্ষী জানান সাইকেল তাকে মামী নয়, মামা কিনে দেয়। অভিযুক্তের আইনজীবীরা সাক্ষীর কাছে এক এক করে জানতে চান অরুণবাবু কোনও রাজনৈতিক দল করতেন কি না। তিনি নবদ্বীপে সিপিএমের নাম করা নেতা ছিলেন কিনা। তাঁর বাড়িতে দলের লোকজন আসত কিনা। উত্তরে সুস্মিতা জানান মামা দল করতেন তবে নেতা ছিলেন কিনা সে কথা বলতে পারবেন না। তবে দলের কোনও লোকজন বাড়িতে আসত না। অরুণবাবু টিউশন করতেন কিনা, কোথায় পড়াতেন, ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরা নিয়মিত বাড়িতে আসতেন কিনা , দিলীপবাবুর এই সব প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী জানান অরুণবাবু বাড়িতে টিউশন করতেন। যারা পড়তে আসত প্রয়োজনে তাদের অভিভাবকেরাও আসতেন।
সুস্মিতা দাসকে জেরায় অভিযুক্তের আইনজীবীরা জানতে চান, তিনি কার কাছ থেকে অরুণবাবু খুন হওয়ার খবর পেয়েছিলেন। উত্তরে সাক্ষী জানান পার্থ রায় বলে তাঁদের এক আত্মীয়ের কাছ থেকে। পার্থ রায়ের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে সাক্ষী বলেন ‘চটির মাঠ’। অরুণ নন্দী এবং উৎপলা নন্দীর অফিস যাওয়ার এবং আসার সময় প্রসঙ্গে জেরার উত্তরে সুস্মিতা আদালতে জানান অরুণবাবু এগারোটা নাগাদ আফিস যেতেন আর পাঁচটার পরে ফিরতেন। উৎপলাদেবী সকাল ন’টা থেকে সাড়ে ন’টা নাগাদ বের হতেন, ফেরার ঠিক ছিল না।
দিলীপবাবু সুস্মিতার কাছে জানতে চান তিনি আজ সাক্ষ্য দিতে এসে আদালতে যা বলছেন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের উত্তরেও তাই বলেছিলেন কিনা। উত্তরে তিনি জানান হ্যাঁ। এরপর তিনি সুস্মিতা দাসের কাছে জানতে চান অরুণবাবু মারা যাওয়ার কিছু পরে উৎপলাদেবী বিষ খেয়েছিলেন কিনা। সাক্ষী বলেন তিনি জানেন না। জবাব শুনে আইনজীবী দিলীপ চট্টোপাধ্যায় পুলিশের কাছে সাক্ষীর দেওয়া জবানবন্দী উদ্ধৃত করে বলেন পুলিশকে সাক্ষীই বলেছিলেন ‘…দেখি মামিমা বাথরুম থেকে বেরিয়ে চুপ করে বসে আছে, মুখ দিয়ে ফেনার মতো বের হচ্ছে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষী বলেন অত দিন আগের ঘটনা তিনি কি বলেছিলেন মনে নেই। আরও নানা বিষয়ে জেরার শেষে অভিযুক্তের আইনজীবী দাবি করেন সুস্মিতা দাস পুলিশের শেখানো মতো মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে এসেছেন। সাক্ষী বলেন এ কথা ঠিক নয়।