Hilsa Fish

বর্ষার পাতে ইলিশ, সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

বিপুল চাহিদা থেকে বেশি মুনাফার লোভে মাছ মাসের পর মাস সংরক্ষণ করা হচ্ছে স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক এমন রাসায়নিক দিয়ে। সেই ইলিশ কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়েই উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট মহল।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:০২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বর্ষা নামতে না নামতেই ইলিশের জন্য মন কেমন করে ওঠে বাঙালির। ইলিশের নানা পদ নিয়ে মেতে ওঠে বাঙালির পাত। কিন্তু এ বার বাঙালির সেই ইলিশ প্রেমে বাদ সেধেছে বিশেষজ্ঞদের মত। যা কপালে ভাঁজ ফেলেছে স্বাস্থ্য সচেতন বহু বাঙালির।

Advertisement

বর্ষার মরসুম এলেই ইলিশের খোঁজে হন্যে হয়ে ওঠে তামাম বাংলা। দিঘা, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ এমনকী প্রতিবেশী মায়ানমার কিংবা বাংলাদেশ থেকেও ইলিশের অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকে বাঙালি। কিন্তু পরিবর্তিত আবহাওয়া, দূষণসহ নানা কারণে রাজ্যে ইলিশ যত দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে, ততই বাড়ছে চাহিদা। বিপুল চাহিদা থেকে বেশি মুনাফার লোভে মাছ মাসের পর মাস সংরক্ষণ করা হচ্ছে স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক এমন রাসায়নিক দিয়ে। সেই ইলিশ কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়েই উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট মহল।

ইলিশ নিয়ে কী সতর্কতা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা? সিঙ্গুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান এবং মৎস্য গবেষক দেবজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, “দীর্ঘদিন যাতে মাছ অবিকৃত ভাবে রাখা যায় তার জন্য ফর্মালিন নামক রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। গবেষণাগারে বিভিন্ন জিনিস বহুকাল সংরক্ষণের জন্য ওই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। কিন্ত মানুষের শরীরের জন্য সেটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমরা বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষাগারে সংরক্ষণ করা ইলিশ পরীক্ষা করে ওই রাসায়নিকের উপস্থিতি পেয়েছি।” তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ ক্রেতারাও এটা পরীক্ষা করতে পারেন। অনলাইনে ‘টেস্ট কিট’ কিনতে পাওয়া যায়। এক ধরনের কাগজ থাকে ওই কিটে। মাছের গায়ে ঠেকালে যদি কাগজ সবুজ হয়ে যায়, বুঝতে হবে মাছে অল্প পরিমাণ ফর্মালিন আছে। আর নীল হয়ে গেলে বুঝতে হবে তা বেশি মাত্রায় আছে। যদি কাগজের রং হলুদ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে তাতে রাসায়নিক নেই।” ইলিশ বিশেষজ্ঞ মুর্শিদাবাদের সূর্যেন্দু দে বলেন, “ইলিশ সংরক্ষণে আগে সনাতনী পদ্ধতি ব্যবহার করা হত। মাটির হাঁড়িতে বিশেষ পদ্ধতিতে ইলিশ রেখে মাটির নীচে রাখা হত। দীর্ঘ সময় তা অবিকৃত থাকত। এছাড়া নুনের ব্যবহারও বহুল প্রচলিত। কিন্তু এখনকার মতো বিপজ্জনক রাসায়নিকের ব্যবহার কল্পনাতীত।”

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কার সমর্থন মেলে কাকদ্বীপের পার্শ্বনাথ দাসের কথায়। ইলিশ ধরার সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত পার্শ্বনাথ বলেন, “আগে যখন প্রচুর মাছ পাওয়া যেত তখন ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনের মাছ বরফ দিয়ে নিয়ে যেতেন। মাছ যত কমতে শুরু করল ততই দাম বাড়ল ও স্টোরে রাখা শুরু করল। এখন যাঁরা ইলিশ মজুত করেন তাঁরা নানা রকম রাসায়নিক ব্যবহার করেন।’’

নদিয়ার প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী মলয় সরকারের কথায়, ‘‘আগে আমরা দিঘা বা ডায়মন্ড হারবার থেকে মাছ কিনে বরফ চাপিয়ে নিয়ে এসে ব্যবসা করতাম। কিন্তু পাঁচ সাত বছর হল সেই পদ্ধতি বদলেছে। ইলিশ সেভাবে আর পাওয়া যাচ্ছেনা। যা পাওয়া যাচ্ছে সব বড় কারবারিরা কিনে নিচ্ছেন। আমরা ওদের থেকে কিনে আনছি। আট থেকে দশ মাস বা এক বছরের পুরনো মাছ কিনতে হয়। টাটকা মাছ কেনা আমাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। তাই স্টোরই ভরসা।”
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ফর্মালিনের কারণে মানুষের লিভার, কিডনির ক্ষতির পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শরীরে বেশি পরিমাণে ওই রাসায়নিক গেলে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং মুখের স্বাদে ইলিশ কেনার আগে একটু ভাবুন। বলছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement