টুইটের ধাক্কায় দুলছে রেলের কামরা

পাঁচ তারা হোটেলে দু’টো কলার দাম প্রায় পাঁচশো টাকা নেওয়া থেকে তিনটে সেদ্ধ ডিম খাওয়ার জন্য প্রায় সাড়ে ১৬০০ টাকার রসিদ ধরানোর কারণে সেলিব্রিটিদের টুইট এখন বহুল চর্চিত।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৫২
Share:

ছবি: সংগৃহীত

‘টুইট’।

Advertisement

শব্দটি আপাতভাবে দেখলে নিরীহ মনে হয়। কারও কাছে শব্দটা কিউটও লাগে। কিন্তু টুইটের যে কত বড় ক্ষমতা টের পেয়েছেন তাঁরা, বিদ্ধ হয়েছেন যাঁরা।

পাঁচ তারা হোটেলে দু’টো কলার দাম প্রায় পাঁচশো টাকা নেওয়া থেকে তিনটে সেদ্ধ ডিম খাওয়ার জন্য প্রায় সাড়ে ১৬০০ টাকার রসিদ ধরানোর কারণে সেলিব্রিটিদের টুইট এখন বহুল চর্চিত। সেই টুইট নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন নেটিজেনেরা। এমনকি তারকাদের হাঁড়ির খবর টুইট পাতলেই শোনা যায়। কে কার সঙ্গে সম্পর্কে আছে, কে কোন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছে—এ যেন ‘আমার টুইট সব জানে’ মার্কা ব্যাপার-স্যাপার!

Advertisement

এখন প্রশ্ন জাগে মানে, টুইট কী গুগল? না, একটু ফারাক আছে। গুগল সব জানে, টুইটে সব জানা যায়। তবে কী টুইট আর গুগলে কোনও মিল নেই? আছে। দুটো ক্ষেত্রেই খুঁজতে হয়। কেউ কেউ করে মজা করে বলেন, খোঁজা জীবন, খোঁজা মরণ। গভীর সমুদ্রে নেমে মুক্ত খোঁজার মতো। এর পরেই আনন্দ। এ স্বাদের ভাগ হবে না নয়, এ স্বাদ ভাগ করে নিতে হয় বন্ধু-কাছের মানুষদের সঙ্গে। এই টুইট শব্দ শুনে আবার শনিবারের শীতের পরশ ছোঁয়া হিমেল সকালে ক্ষোভে ফুঁসছেন ভাগীরথী এক্সপ্রেসের বাতানুকূল কামরা সাফাইয়ের দায়িত্বে থাকা এক রেল কর্মী, সকলের কাছের মানুষ অজিত মণ্ডল। গত চার বছর ধরে তিনি ভাগীরথীর বাতানুকূল তিনটে কামরার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী। যারা নিয়মিত ভাগীরথী এক্সপ্রেস ট্রেনে শিয়ালদহ-লালগোলা রুটে যাতায়াত করেন, তাঁরা সকলেই অজিতদাকে এক নামে চেনেন। শান্ত, নিরীহ এবং সবচেয়ে বড় কথা নীরবে নিজের কাজটুকু করে চলা মানুষ তিনি। বাতানুকূল তিনটে কামরা পরিচ্ছন্ন করার বাইরে মনে হয় পৃথিবীর কোনও ব্যাপারে তাঁর যেন আগ্রহ বা কৌতুহল নেই, এমনই চরিত্রের মানুষ ওই রেল কর্মী। সেই অজিতদা বাতানুকূল সি-থ্রি কামরার দরজায় হেলান দিয়ে ঘাড় নাড়ছেন আর বিড়বিড় করে চলছেন। তা দেখে এক যাত্রীর প্রশ্ন—অজিতদা কি হল?

প্রশ্ন শুনেও চুপ তিনি। কোনও উত্তর নেই।

ওই যাত্রী নিজের কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে ফের জিজ্ঞাসা করলেন—অজিতদা কোনও কী সমস্যা হয়েছে।

অজিতদা বলছেন—আর বলবেন না। বলছে টুইট করবে।

—কে টুইট করবে বলছে এবং কেন টুইট করবে?

—আমি বার বার সাফাই করছি তাই। তাতে নাকি তাঁর অসুবিধা হচ্ছে!

তারপর যোগ করছেন, ‘‘টুইট করবে। করুক। আমিও পাল্টা টুইট করবো।’’

—আপনি কী টুইট করবেন?

—লিখবো ওই যাত্রী শুচিবাইগ্রস্ত। মানসিক ভাবে অসুস্থ। চিকিৎসার প্রয়োজন তাঁর!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement